গর্ভবতীর লক্ষণ: ভূমিকা-
মাতৃত্ব একজন নারীর জীবনের এক অমূল্য অধ্যায়। তবে এই যাত্রার শুরুতেই অনেক মা বুঝতে চান যে তিনি সত্যিই গর্ভবতী হয়েছেন কি না। সাধারণত গর্ভধারণের পর শরীরে কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়, যেগুলোকে গর্ভবতীর লক্ষণ বলা হয়। এই লক্ষণগুলো সম্পর্কে আগে থেকে জানা থাকলে মা দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন এবং শিশুর যত্ন নেওয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ শুরু করতে পারেন।
গর্ভবতীর প্রাথমিক লক্ষণ-
গর্ভধারণের প্রথম কয়েক সপ্তাহেই শরীরে কিছু সাধারণ লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমনঃ
মাসিক বন্ধ হওয়া- গর্ভাবস্থার সবচেয়ে সাধারণ ও নিশ্চিত প্রাথমিক লক্ষণ হলো মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া।
বমি বমি ভাব ও বমি-অনেক নারী সকালে ঘুম থেকে উঠেই বমি বমি ভাব বা বমির সম্মুখীন হন, যাকে “মর্নিং সিকনেস” বলা হয়।
শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি- শরীরে হরমোন পরিবর্তনের কারণে দ্রুত ক্লান্তি চলে আসে।
স্তনে পরিবর্তন- স্তনে ফোলাভাব, ব্যথা ও কালচে হয়ে যাওয়া গর্ভাবস্থার অন্যতম লক্ষণ।
গর্ভবতীর সাধারণ শারীরিক লক্ষণ-
১. ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ
গর্ভধারণের পর জরায়ু বড় হতে শুরু করে এবং মূত্রথলির ওপর চাপ পড়ে। ফলে বারবার প্রস্রাবের চাপ অনুভূত হয়।
২. ওজন বৃদ্ধি
গর্ভাবস্থার শুরুতে ওজন কিছুটা বাড়তে শুরু করে। এটি একটি স্বাভাবিক পরিবর্তন।
৩. ক্ষুধার পরিবর্তন
কখনো ক্ষুধা বেড়ে যায়, আবার কখনো নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি বিরূপতা দেখা যায়।
৪. স্বাদের পরিবর্তন
অনেক নারী গর্ভাবস্থায় টক বা ঝাল খাবার খেতে বেশি পছন্দ করেন।
৫. মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়া
হঠাৎ করে মাথা ঘোরা বা দুর্বল লাগা গর্ভধারণের স্বাভাবিক লক্ষণ।
গর্ভবতীর মানসিক লক্ষণ-
১. মুড সুইং বা মানসিক ওঠানামা
হরমোন পরিবর্তনের কারণে গর্ভবতী মা হঠাৎ করে আনন্দিত আবার হঠাৎ দুঃখিত বোধ করতে পারেন।
২. উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা
গর্ভাবস্থায় মায়ের মনে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় বা দুশ্চিন্তা কাজ করতে পারে।
৩. আবেগপ্রবণতা
ক্ষুদ্র বিষয়েও সহজে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়া একটি সাধারণ লক্ষণ।
গর্ভবতীর বিশেষ লক্ষণ যা গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত-
১. অতিরিক্ত রক্তপাত
- গর্ভাবস্থায় হালকা স্পটিং স্বাভাবিক হলেও অতিরিক্ত রক্তপাত হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
২. তীব্র পেটব্যথা
- হালকা ব্যথা স্বাভাবিক, তবে তীব্র ব্যথা জটিলতার লক্ষণ হতে পারে।
৩. উচ্চ রক্তচাপ ও হাত-পা ফোলা
- এটি প্রি-এক্লাম্পসিয়া নামক জটিল রোগের লক্ষণ হতে পারে।
৪. শিশুর নড়াচড়া কমে যাওয়া
- গর্ভের শিশুর নড়াচড়া স্বাভাবিক নিয়মে হওয়া উচিত। এটি বন্ধ হলে সতর্ক হতে হবে।
গর্ভবতীর লক্ষণ কতদিনে বোঝা যায়?-
- সাধারণত গর্ভধারণের ২-৩ সপ্তাহ পর থেকেই প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেয়।
- মাসিক মিস হলে এবং উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে গর্ভধারণ পরীক্ষার কিট ব্যবহার করে নিশ্চিত হওয়া যায়।
- তারপর চিকিৎসকের কাছে গিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানো উচিত।
গর্ভবতীর লক্ষণ বুঝে করণীয়-
- গর্ভধারণ নিশ্চিত হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- সুষম খাদ্যাভ্যাস শুরু করতে হবে।
- বিশ্রাম ও ঘুম যথেষ্ট নিতে হবে।
- ধূমপান, মদ্যপান বা ক্ষতিকর খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।
- নিয়মিত চেকআপ ও ভিটামিন গ্রহণ করতে হবে।
উপসংহার-
গর্ভবতীর লক্ষণ প্রতিটি নারীর জন্য ভিন্ন হতে পারে। তবে মাসিক বন্ধ হওয়া, বমি বমি ভাব, স্তনে পরিবর্তন, ক্লান্তি ও ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ গর্ভাবস্থার সাধারণ লক্ষণ। প্রাথমিক পর্যায়ে এসব লক্ষণ চিহ্নিত করা হলে মায়ের সুস্থতা ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হয়। তাই গর্ভধারণের পর শরীরের পরিবর্তনগুলোর প্রতি নজর দেওয়া এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে উত্তম।
গর্ভবতীর লক্ষণ সম্পর্কিত প্রশ্ন-
প্রশ্ন ১: গর্ভবতীর প্রথম লক্ষণ কী?
উত্তর: মাসিক বন্ধ হওয়া, বমি বমি ভাব ও স্তনে পরিবর্তন গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ।
প্রশ্ন ২: গর্ভাবস্থায় বমি কবে থেকে শুরু হয়?
উত্তর: সাধারণত গর্ভধারণের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বমি শুরু হয় এবং প্রথম তিন মাসে বেশি হয়।
প্রশ্ন ৩: গর্ভাবস্থায় সব নারী কি একই লক্ষণ অনুভব করেন?
উত্তর: না, গর্ভবতীর লক্ষণ ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হতে পারে। কারো ক্ষেত্রে হালকা, আবার কারো ক্ষেত্রে তীব্র হতে পারে।
প্রশ্ন ৪: গর্ভধারণের লক্ষণ বোঝার পর কী করণীয়?
উত্তর: গর্ভধারণ নিশ্চিত হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও ওষুধ শুরু করতে হবে।
প্রশ্ন ৫: গর্ভাবস্থায় কোন লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?
উত্তর: তীব্র রক্তপাত, পেটে প্রচণ্ড ব্যথা, হাত-পা ফোলা, মাথাব্যথা বা শিশুর নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।