গর্ভাবস্থায় পানিশূন্যতা প্রতিরোধ ও সমাধান

গর্ভাবস্থায় পানিশূন্যতা: কেন হয়?-

গর্ভাবস্থায় শরীরে নানা ধরণের শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটে। রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য বেশি তরল প্রয়োজন হয়। পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া গরম আবহাওয়া অতিরিক্ত বমি ডায়রিয়া বা অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণে গর্ভাবস্থায় পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে।

গর্ভাবস্থায় পানিশূন্যতার লক্ষণ-

গর্ভাবস্থায় পানিশূন্যতা হলে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যায় যেমন মুখ শুকিয়ে যাওয়া মাথা ঘোরা মাথাব্যথা প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হয়ে যাওয়া ক্লান্তি ও অস্বস্তি পেট ব্যথা বা কোষ্ঠকাঠিন্য শিশুর নড়াচড়া কম অনুভব হওয়া। এসব লক্ষণ অবহেলা করলে গুরুতর জটিলতা তৈরি হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় পানিশূন্যতার ঝুঁকি-

গর্ভাবস্থায় পানিশূন্যতা শুধুমাত্র মায়ের জন্য নয় বরং শিশুর জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। এতে প্রি-টার্ম লেবার শিশুর ওজন কমে যাওয়া এমনিওটিক ফ্লুইড কমে যাওয়া জন্মগত সমস্যা এমনকি গর্ভপাতের মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই সময়মতো প্রতিরোধ ও চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

গর্ভাবস্থায় পানিশূন্যতা প্রতিরোধের উপায়-

গর্ভাবস্থায় পানিশূন্যতা প্রতিরোধের জন্য দৈনিক পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত। সাধারণত দিনে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি খাওয়া প্রয়োজন তবে গরমকালে বা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের সময় আরো বেশি পানি খেতে হবে। পাশাপাশি ফলের রস নারিকেল পানি স্যুপ ও তরল জাতীয় খাবার খেলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে।

গর্ভাবস্থায় সঠিক খাদ্যাভ্যাস-

শুধু পানি নয় বরং সঠিক খাদ্যাভ্যাসও গর্ভাবস্থায় পানিশূন্যতা প্রতিরোধে সহায়ক। পানিযুক্ত ফল যেমন তরমুজ কমলা আঙ্গুর শসা ও ডাব খাওয়া ভালো। ভাজা বা ঝাল খাবার কমিয়ে দেওয়া উচিত কারণ এগুলো শরীরে পানির ঘাটতি বাড়াতে পারে।

গরম আবহাওয়ায় করণীয়-

গরম আবহাওয়ায় গর্ভবতী মায়েদের শরীরে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। এ সময় বাইরে বের হলে হালকা পোশাক পরতে হবে সানগ্লাস ও ছাতা ব্যবহার করতে হবে এবং সবসময় পানির বোতল সঙ্গে রাখতে হবে। বাড়ি ফিরে অবশ্যই বিশ্রাম নিতে হবে এবং ঠান্ডা পানি বা ফলের রস খেতে হবে।

পানিশূন্যতা হলে করণীয়-

যদি গর্ভাবস্থায় পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দেয় তবে অবিলম্বে পানি বা ওআরএস খাওয়া উচিত। যদি বমি ডায়রিয়া বা অতিরিক্ত দুর্বলতা থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক সময় স্যালাইনের প্রয়োজন হতে পারে। নিজে থেকে ওষুধ না খেয়ে বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া জরুরি।

শিশুর জন্য প্রভাব-

গর্ভাবস্থায় পানিশূন্যতা হলে শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। মায়ের শরীরে পর্যাপ্ত তরল না থাকলে শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবরাহে সমস্যা হয়। এতে শিশুর ওজন কমে যাওয়া এমনকি জন্মের পর শিশুর সুস্থতায় প্রভাব ফেলতে পারে।

ঘরোয়া সমাধান-

গর্ভাবস্থায় পানিশূন্যতা প্রতিরোধে সহজ কিছু ঘরোয়া সমাধান হলো নারিকেল পানি খাওয়া লেবুর শরবত খাওয়া ঠান্ডা দুধ খাওয়া স্যুপ বা ঝোল জাতীয় খাবার খাওয়া এবং তরল ফলমূল নিয়মিত খাওয়া। এগুলো শরীরকে দ্রুত হাইড্রেট করে।

গর্ভাবস্থায় কতটা পানি খাওয়া উচিত-

গর্ভাবস্থায় সাধারণত দিনে ২ থেকে ৩ লিটার পানি খাওয়া উচিত। তবে আবহাওয়া ও শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে। একসাথে বেশি পানি না খেয়ে অল্প অল্প করে সারাদিনে বারবার পানি খাওয়াই উত্তম।

পানিশূন্যতা ও প্রসবকাল-

গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে পানিশূন্যতা থাকলে প্রসব জটিল হতে পারে। শরীরে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে জরায়ুর সংকোচন ব্যাহত হতে পারে। এতে প্রসব বিলম্বিত বা জটিল হয়ে যেতে পারে। তাই গর্ভাবস্থার শেষ সময়েও হাইড্রেশন বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

চিকিৎসকের পরামর্শ কবে নিতে হবে-

যদি গর্ভাবস্থায় পানিশূন্যতার কারণে অতিরিক্ত মাথা ঘোরা বারবার বমি প্রস্রাবে জ্বালা পেট ব্যথা বা শিশুর নড়াচড়া কম অনুভূত হয় তবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। অনেক সময় ডিহাইড্রেশন মারাত্মক আকার নিতে পারে।

উপসংহার-

গর্ভাবস্থায় পানিশূন্যতা একটি সাধারণ কিন্তু গুরুতর সমস্যা যা মায়ের ও শিশুর উভয়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই শুরু থেকেই সচেতন থাকা প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পানি পান করা পানিযুক্ত ফলমূল খাওয়া এবং শরীরকে সবসময় হাইড্রেটেড রাখা গর্ভকালীন সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে যে কোনো জটিলতা সহজেই এড়ানো যায়।

প্রশ্নত্তোর-

গর্ভাবস্থায় পানিশূন্যতা হলে কি করণীয়?

পর্যাপ্ত পানি ও ওআরএস খাওয়া উচিত এবং গুরুতর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

গর্ভাবস্থায় দিনে কত পানি খাওয়া প্রয়োজন?

গর্ভাবস্থায় দিনে গড়ে ২ থেকে ৩ লিটার পানি খাওয়া প্রয়োজন।

পানিশূন্যতা কি শিশুর ক্ষতি করে?

হ্যাঁ গর্ভাবস্থায় পানিশূন্যতা হলে শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে ওজন কমে যেতে পারে এবং জটিলতা তৈরি হতে পারে।

গরমকালে পানিশূন্যতা এড়াতে কি করা উচিত?

গরমে হালকা পোশাক পরা ছাতা ব্যবহার করা এবং সবসময় পানি সঙ্গে রাখা জরুরি।

ওআরএস খাওয়া কি গর্ভাবস্থায় নিরাপদ?

হ্যাঁ ওআরএস খাওয়া নিরাপদ তবে যেকোনো জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
Scroll to Top