গর্ভাবস্থায় স্ক্যাবিস-
গর্ভাবস্থায় মা নানা ধরণের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান। এই সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়, ফলে সংক্রমণজনিত সমস্যা সহজেই হতে পারে। গর্ভাবস্থায় স্ক্যাবিস একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর সমস্যা, যা চুলকানি ও ত্বকের জ্বালাভাবের মাধ্যমে দেখা দেয়। এটি মূলত সারকপটিস স্ক্যাবেই নামের ক্ষুদ্র পরজীবী মাইট দ্বারা সৃষ্ট।
স্ক্যাবিস কী?-
স্ক্যাবিস হলো এক ধরনের সংক্রামক চর্মরোগ, যেখানে ক্ষুদ্র মাইট ত্বকের উপরিভাগে ঢুকে ডিম পাড়ে। এর ফলে প্রচণ্ড চুলকানি, লাল দাগ এবং ফুসকুড়ির মতো উপসর্গ দেখা দেয়। স্ক্যাবিস হলে অস্বস্তি বাড়ে এবং সঠিক চিকিৎসা না করলে এটি অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
গর্ভাবস্থায় স্ক্যাবিস হওয়ার কারণ-
গর্ভাবস্থায় স্ক্যাবিস হওয়ার মূল কারণ হলো মাইট নামক জীবাণুর সংক্রমণ। সাধারণত নিচের কারণে এই রোগ ছড়াতে পারে:
- ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শ – পরিবারের সদস্য বা স্বামীর কাছ থেকে।
- সংক্রমিত কাপড় বা বিছানার ব্যবহার।
- অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস।
- দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা – যা গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা কমে যায়।
- হাসপাতাল বা হোস্টেলের মতো ভিড়যুক্ত জায়গায় থাকা।
গর্ভাবস্থায় স্ক্যাবিসের উপসর্গ-
গর্ভাবস্থায় স্ক্যাবিসের উপসর্গগুলো সাধারণ স্ক্যাবিসের মতো হলেও মায়ের জন্য এটি বেশি অস্বস্তিকর হয়। যেমন:
- তীব্র চুলকানি, বিশেষ করে রাতে
- হাতের আঙুলের ফাঁকে লাল দাগ বা র্যাশ
- কবজি, কনুই, কোমর ও বুকে ফুসকুড়ি
- স্তন, পেট বা জননাঙ্গে ফোস্কার মতো দাগ
- নখের নিচে ও ত্বকের ভাঁজে ছোট ছোট গর্তের মতো দাগ
- অতিরিক্ত চুলকানোর ফলে ঘা বা ইনফেকশন
গর্ভাবস্থায় স্ক্যাবিস মায়ের ও শিশুর জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?-
- মায়ের জন্য ঝুঁকি:
চুলকানির কারণে ঘুমের ব্যাঘাত, মানসিক চাপ, ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হতে পারে। - শিশুর জন্য ঝুঁকি:
যদিও সরাসরি ভ্রূণের ক্ষতি করে না, তবে সংক্রমণের কারণে মায়ের শরীর দুর্বল হয়ে গেলে গর্ভাবস্থায় জটিলতা বাড়তে পারে। জন্মের পর নবজাতকেরও স্ক্যাবিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে যদি মা চিকিৎসা না করান।
গর্ভাবস্থায় স্ক্যাবিস নির্ণয়-
চিকিৎসক সাধারণত উপসর্গ ও ত্বক পরীক্ষা করে স্ক্যাবিস চিহ্নিত করেন। প্রয়োজনে Skin Scraping Test করে মাইক্রোস্কোপে মাইট দেখা যায়।
গর্ভাবস্থায় স্ক্যাবিসের চিকিৎসা-
গর্ভাবস্থায় যেকোনো ওষুধ ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কিছু ওষুধ ভ্রূণের ক্ষতি করতে পারে, তাই নিরাপদ চিকিৎসা বেছে নিতে হবে।
ওষুধ ব্যবহার
-
- সাধারণত গর্ভবতীদের জন্য Permethrin Cream 5% নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হয়।
- ডাক্তার নির্দেশ অনুযায়ী পুরো শরীরে ব্যবহার করতে হবে।
- গর্ভাবস্থায় Lindane Lotion এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এটি শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
চুলকানি কমানোর উপায়
-
- ঠাণ্ডা পানির স্নান করা
- অ্যালার্জি প্রতিরোধক ওষুধ (Antihistamine) ব্যবহার (ডাক্তারের পরামর্শে)
- নখ ছোট রাখা
বিছানা ও কাপড় জীবাণুমুক্ত করা
-
- গরম পানিতে কাপড় ও বিছানাপত্র ধুতে হবে
- সূর্যের আলোতে শুকাতে হবে
- কয়েকদিন ব্যবহার না করে আলাদা ব্যাগে সিল করে রাখা যেতে পারে
গর্ভাবস্থায় স্ক্যাবিস প্রতিরোধের উপায়-
- সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা
- প্রতিদিন পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করা
- পরিবারের সব সদস্যকে একসঙ্গে চিকিৎসা করানো
- ব্যবহার্য জিনিসপত্র পরিষ্কার রাখা
- জনসমাগমস্থলে সতর্ক থাকা
ঘরোয়া প্রতিকার (চিকিৎসকের পরামর্শের পাশাপাশি)-
- নারকেল তেল ও হলুদ মিশ্রণ – ত্বকের চুলকানি কিছুটা কমাতে পারে।
- নিমপাতার পেস্ট – ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক প্রতিরোধে সহায়ক।
- অ্যালোভেরা জেল – ত্বক ঠাণ্ডা ও আরাম দেয়।
তবে মনে রাখতে হবে, ঘরোয়া প্রতিকার কখনও চিকিৎসকের বিকল্প নয়।
উপসংহার-
গর্ভাবস্থায় স্ক্যাবিস একটি বিরক্তিকর কিন্তু নিরাময়যোগ্য সমস্যা। দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলে মা ও শিশু দুজনেই নিরাপদ থাকেন। এসময় আত্ম-সচেতনতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং পরিবারের সব সদস্যকে একসঙ্গে চিকিৎসা করা অত্যন্ত জরুরি।
গর্ভাবস্থায় স্ক্যাবিস সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্নোত্তর-
১. গর্ভাবস্থায় স্ক্যাবিস কি শিশুর জন্য ক্ষতিকর?
না, সরাসরি ভ্রূণের ক্ষতি করে না। তবে চিকিৎসা না করলে নবজাতক জন্মের পর সংক্রমিত হতে পারে।
২. গর্ভাবস্থায় স্ক্যাবিস হলে কি ঘরোয়া চিকিৎসা যথেষ্ট?
না, এটি পুরোপুরি নিরাময়ের জন্য অবশ্যই ডাক্তারি চিকিৎসা প্রয়োজন। ঘরোয়া প্রতিকার কেবল আরাম দেয়।
৩. কোন ওষুধ গর্ভবতীদের জন্য নিরাপদ?
Permethrin Cream সাধারণত নিরাপদ, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৪. স্ক্যাবিস কি আবার হতে পারে?
হ্যাঁ, যদি পরিবারের সবাই চিকিৎসা না নেয় বা সংক্রমিত জিনিস ব্যবহার করা হয় তবে পুনরায় হতে পারে।
৫. গর্ভাবস্থায় স্ক্যাবিস প্রতিরোধ কিভাবে করব?
পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে দূরে থাকা এবং সব কাপড় ও বিছানা নিয়মিত ধোয়া সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ।