টামি টাইম কি? শিশুর জন্য কেন উপকারী?-
একজন শিশুর জন্মের পর তার সুস্থ বিকাশ নিশ্চিত করার জন্য কিছু নিয়মিত যত্ন অত্যন্ত প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি হলো টামি টাইম। নতুন মায়েরা প্রায়ই প্রশ্ন করেন – “টামি টাইম কি?” আসলে এটি এমন একটি ব্যায়াম বা অবস্থান, যেখানে শিশুকে জেগে থাকা অবস্থায় তার পেটের ওপর (tummy) শোয়ানো হয়। সাধারণভাবে বলা যায়, টামি টাইম হলো শিশুকে সামান্য সময়ের জন্য বুক ও পেটের ওপর ভর দিয়ে শোয়ানো, যাতে সে মাথা, গলা ও হাত নড়াচড়া করতে পারে।
এই সহজ কার্যকলাপ শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খুবই উপকারী। অনেক শিশু বিশেষজ্ঞই শিশুর জন্মের পর থেকেই প্রতিদিন অল্প সময়ের জন্য টামি টাইম করার পরামর্শ দেন।
টামি টাইম কি?-
টামি টাইম হলো এমন একটি কার্যকলাপ যেখানে শিশুকে জেগে থাকা অবস্থায় মায়ের কোলে, খাটে বা মাটিতে নরম চাদরের ওপর পেটের ভর দিয়ে শোয়ানো হয়। এ সময় শিশুটি মাথা তোলার চেষ্টা করে, হাত-পা নড়াচড়া করে এবং ধীরে ধীরে তার পেশি ও স্নায়ুর উন্নয়ন ঘটে। বিশেষ করে, নবজাতক শিশুরা যখন সবসময় পিঠে শুয়ে থাকে, তখন টামি টাইম তাদের জন্য ভারসাম্য আনার কাজ করে। কারণ এটি ঘাড়, কাঁধ ও পিঠের পেশিকে শক্তিশালী করে এবং শিশুর পরবর্তী বসা, হামাগুড়ি দেওয়া ও হাঁটার ভিত্তি তৈরি করে।
শিশুর জন্য টামি টাইম কেন উপকারী?-
১. ঘাড় ও কাঁধের পেশি শক্তিশালী হয়
শিশু যখন টামি টাইমে থাকে, তখন তাকে মাথা তুলতে হয়। এর ফলে তার ঘাড়, কাঁধ ও হাতের পেশি শক্তিশালী হয়।
২. মাথার আকার স্বাভাবিক থাকে
সবসময় পিঠে শোয়ালে শিশুর মাথা চেপ্টা হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। টামি টাইম সেই ঝুঁকি কমায় এবং মাথার আকার সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।
৩. মোটর স্কিল উন্নয়ন হয়
টামি টাইম শিশুর হাত-পা নড়াচড়ায় সহায়তা করে, যা ভবিষ্যতে হামাগুড়ি, বসা ও হাঁটার জন্য ভিত্তি তৈরি করে।
৪. স্নায়ুতন্ত্র ও চোখ-হাতের সমন্বয় বৃদ্ধি পায়
শিশু যখন সামনে রাখা খেলনা ধরতে চেষ্টা করে, তখন চোখ-হাতের সমন্বয় তৈরি হয়।
৫. আত্মবিশ্বাস ও স্বাধীনতা তৈরি হয়
টামি টাইমে শিশু নিজে নড়াচড়া করতে শেখে। এটি তার আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং স্বাধীনভাবে নড়াচড়ার সক্ষমতা তৈরি করে।
৬. হজমে সহায়তা করে
পেটের ভর দিয়ে শোয়ালে অনেক সময় গ্যাস ও অস্বস্তি কমে যায়। ফলে হজম ভালো হয় এবং শিশু আরাম বোধ করে।
টামি টাইম কখন থেকে শুরু করবেন?-
শিশু জন্মের পর থেকেই টামি টাইম শুরু করা যায়। তবে প্রথম দিকে খুব অল্প সময় (১-২ মিনিট) দিয়ে শুরু করতে হবে এবং ধীরে ধীরে সময় বাড়াতে হবে। শিশুর বয়স অনুযায়ী টামি টাইমের সময়সীমা ভিন্ন হতে পারে –
- ০–২ মাস: প্রতিদিন ২–৩ বার, প্রতিবার ১–২ মিনিট।
- ৩–৪ মাস: প্রতিদিন কয়েকবার, প্রতিবার ৫–১০ মিনিট।
- ৫–৬ মাস: প্রতিদিন কয়েকবার, প্রতিবার ১৫–২০ মিনিট।
টামি টাইম করার সঠিক পদ্ধতি-
- শিশুকে সবসময় জেগে থাকা অবস্থায় পেটের ওপর শোয়াতে হবে।
- একটি নরম ও পরিষ্কার চাদর বা ম্যাট ব্যবহার করতে হবে।
- শিশুর পাশে বসে থাকতে হবে, যাতে সে নিরাপদ থাকে।
- শুরুতে অল্প সময় দিয়ে শুরু করতে হবে এবং ধীরে ধীরে সময় বাড়াতে হবে।
- শিশুর সামনে খেলনা রেখে তাকে আগ্রহী করতে পারেন।
টামি টাইম করার সময় যেসব সতর্কতা মানতে হবে-
- শিশুকে কখনোই একা ফেলে রাখা যাবে না।
- খাওয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে টামি টাইম করা উচিত নয়।
- খুব বেশি সময় ধরে না করে ধীরে ধীরে সময় বাড়াতে হবে।
- যদি শিশু কাঁদতে থাকে, তাহলে জোর করে শোয়ানো উচিত নয়।
টামি টাইম না করলে কী হতে পারে?-
যদি শিশু টামি টাইম না করে, তবে:
- তার ঘাড় ও কাঁধের পেশি দুর্বল থাকতে পারে।
- হামাগুড়ি দিতে দেরি হতে পারে।
- মাথার পেছনের অংশ চেপ্টা হয়ে যেতে পারে।
- চোখ-হাতের সমন্বয় গঠনে বিলম্ব হতে পারে।
টামি টাইম নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ-
শিশুর জন্মের পর থেকেই টামি টাইম শুরু করা সবচেয়ে ভালো। তবে মায়ের উচিত শিশুর আরাম ও নিরাপত্তাকে সর্বাগ্রে রাখা। শিশু যদি শুরুতে না মানে, তবে মায়ের বুকের ওপর শুইয়ে দিয়েও টামি টাইম শুরু করা যায়। এভাবে শিশুটি ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।
উপসংহার-
টামি টাইম কি? এর উত্তর হলো – এটি একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত উপকারী কার্যকলাপ যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য। ঘাড়, কাঁধ, পিঠের পেশি শক্তিশালী করা থেকে শুরু করে হামাগুড়ি ও হাঁটার ভিত্তি গড়ে তোলা—সবকিছুতেই টামি টাইমের ভূমিকা অপরিসীম। তাই প্রতিটি মায়ের উচিত জন্মের পর থেকেই শিশুর নিরাপদ টামি টাইম শুরু করা।
টামি টাইম কি? শিশুর জন্য কেন উপকারী? প্রশ্নউত্তর-
প্রশ্ন ১: টামি টাইম কি?
উত্তর: টামি টাইম হলো এমন একটি কার্যকলাপ যেখানে শিশুকে জেগে থাকা অবস্থায় পেটের ওপর শোয়ানো হয়, যাতে তার ঘাড়, কাঁধ ও পিঠের পেশি শক্তিশালী হয়।
প্রশ্ন ২: টামি টাইম কখন শুরু করা উচিত?
উত্তর: জন্মের পর থেকেই টামি টাইম শুরু করা যায়। প্রথমে ১–২ মিনিট দিয়ে শুরু করতে হবে এবং ধীরে ধীরে সময় বাড়াতে হবে।
প্রশ্ন ৩: টামি টাইম না করলে কী সমস্যা হয়?
উত্তর: টামি টাইম না করলে শিশুর পেশি দুর্বল থাকতে পারে, হামাগুড়ি দিতে দেরি হতে পারে এবং মাথার আকার চেপ্টা হয়ে যেতে পারে।
প্রশ্ন ৪: শিশুকে দিনে কতবার টামি টাইম করানো উচিত?
উত্তর: নবজাতক শিশুর জন্য দিনে অন্তত ২–৩ বার এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দিনে কয়েকবার টামি টাইম করানো ভালো।
প্রশ্ন ৫: টামি টাইম কি নিরাপদ?
উত্তর: হ্যাঁ, তবে শিশুকে কখনোই একা ফেলে রাখা যাবে না। সবসময় মায়ের উপস্থিতিতে টামি টাইম করাতে হবে।
প্রশ্ন ৬: টামি টাইম করলে কি হজম ভালো হয়?
উত্তর: হ্যাঁ, অনেক সময় টামি টাইম শিশুর পেটের গ্যাস কমাতে এবং হজমে সহায়তা করে।
প্রশ্ন ৭: টামি টাইম করার সেরা সময় কখন?
উত্তর: খাওয়ানোর অন্তত ২০–৩০ মিনিট পর টামি টাইম করা সবচেয়ে ভালো।
প্রশ্ন ৮: শিশুরা টামি টাইমে কাঁদে কেন?
উত্তর: শিশুরা নতুন অবস্থায় অস্বস্তি বোধ করতে পারে। তাই অল্প সময় দিয়ে শুরু করতে হবে এবং ধীরে ধীরে অভ্যাস করাতে হবে।