ডেলিভারির ডেট ওভার

ডেলিভারির ডেট ওভার- কতদিন অপেক্ষা করবেন? জানুন ঝুঁকি ও করণীয়

ডেলিভারির ডেট ওভার – কত দিন অপেক্ষা করবেন?-

গর্ভাবস্থার শেষ মুহূর্তে প্রত্যেক মা-ই অপেক্ষায় থাকেন সেই বিশেষ দিনের জন্য—ডেলিভারির ডেট। সাধারণত ডাক্তাররা আল্ট্রাসাউন্ড বা শেষ মাসিকের তারিখ অনুযায়ী সম্ভাব্য প্রসব তারিখ (EDD – Expected Date of Delivery) নির্ধারণ করেন। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় নির্ধারিত তারিখ পেরিয়েও প্রসব শুরু হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিকেই বলা হয় ডেলিভারির ডেট ওভার

অনেক মা ও পরিবার এ সময় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন—”কতদিন অপেক্ষা করা নিরাপদ?” অথবা “ডেলিভারির ডেট পেরিয়ে গেলে মা ও শিশুর ঝুঁকি কী?”। এই ব্লগে আমরা বিস্তারিত জানবো ডেলিভারির ডেট ওভার বিষয়টি নিয়ে।

স্বাভাবিক গর্ভকাল কতদিন?-

  • সাধারণত একটি পূর্ণ গর্ভকাল ৩৭ থেকে ৪২ সপ্তাহ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
  • ৪০ সপ্তাহে গর্ভকাল সম্পূর্ণ ধরা হয়।
  • ৪২ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলে তাকে Post-term pregnancy বলা হয়।

কেন ডেলিভারির ডেট ওভার হয়?-

ডেলিভারির ডেট ওভার হওয়ার কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  • প্রথমবার গর্ভধারণ – প্রথমবার গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে অনেক সময় প্রসব বিলম্ব হয়।
  • ভুল তারিখ গণনা – অনেক সময় মাসিক চক্র বা আল্ট্রাসাউন্ড অনুযায়ী তারিখে ভুল হতে পারে।
  • জেনেটিক কারণ – পরিবারে দেরিতে প্রসব হওয়ার ইতিহাস থাকলে মায়েরও সেই সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • হরমোনাল সমস্যা – কিছু মায়ের হরমোনাল পরিবর্তন প্রসব বিলম্বিত করতে পারে।
  • শিশুর অবস্থান – শিশুর অবস্থান ঠিক না থাকলে প্রসব স্বাভাবিকভাবে শুরু হতে দেরি হতে পারে।

ডেলিভারির ডেট ওভার হলে ঝুঁকি-

ডেলিভারির ডেট পেরিয়ে গেলে মা ও শিশুর উভয়ের জন্য কিছু ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। যেমন:

  • শিশুর জন্য ঝুঁকি
    • অক্সিজেনের ঘাটতি হতে পারে।
    • প্লাসেন্টার কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে।
    • শিশুর আকার বড় হয়ে গেলে স্বাভাবিক প্রসব কঠিন হয়।
    • আমনিওটিক ফ্লুইড কমে যেতে পারে।
  • মায়ের জন্য ঝুঁকি
    • প্রসব জটিল হয়ে উঠতে পারে।
    • জরুরি সিজারিয়ান করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
    • প্রসব বেদনা দীর্ঘ হতে পারে।
    • মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বাড়ে।

ডেলিভারির ডেট ওভার হলে ডাক্তাররা কী করেন?-

  • শিশুর অবস্থান ও নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ
    আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে শিশুর ওজন, প্লাসেন্টার অবস্থা ও পানি (আমনিওটিক ফ্লুইড) পরীক্ষা করা হয়।
  • Non-Stress Test (NST)
    শিশুর হার্টবিট পর্যবেক্ষণ করা হয়।
  • Induction of Labor (লেবার ইন্ডিউস)
    যদি ডাক্তার মনে করেন বেশি অপেক্ষা ঝুঁকিপূর্ণ, তবে ওষুধ বা মেকানিক্যাল পদ্ধতিতে প্রসব শুরু করানো হয়।
  • সিজারিয়ান ডেলিভারি
    জরুরি পরিস্থিতি বা শিশুর জীবন ঝুঁকিতে থাকলে সিজারিয়ান করা হয়।

ডেলিভারির ডেট ওভার হলে কতদিন অপেক্ষা করবেন?-

  • সাধারণত ডাক্তাররা ৪১ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন, যদি মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ থাকে।
  • ৪২ সপ্তাহের পর অপেক্ষা করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।
  • অনেক ক্ষেত্রে ৪০ সপ্তাহ পেরোলেই পর্যবেক্ষণ শুরু হয় এবং প্রয়োজনে প্রসব করানো হয়।

মায়ের করণীয়-

  • নিয়মিত ডাক্তারকে ফলো-আপ করুন।
  • শিশুর নড়াচড়া ঠিক আছে কিনা লক্ষ্য করুন।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
  • মানসিকভাবে শান্ত থাকুন, দুশ্চিন্তা করবেন না।
  • প্রসবের লক্ষণ (পানি ভাঙা, রক্তপাত, তীব্র ব্যথা) দেখলেই দ্রুত হাসপাতালে যান।

পরিবার ও সাপোর্ট সিস্টেমের ভূমিকা-

ডেলিভারির ডেট ওভার হলে মাকে মানসিকভাবে শান্ত রাখা অত্যন্ত জরুরি। পরিবারকে বুঝতে হবে—এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গেলে মা ও শিশু দুজনেই নিরাপদ থাকে।

উপসংহার-

ডেলিভারির ডেট ওভার হওয়া একটি সাধারণ বিষয়, তবে অতিরিক্ত দেরি হলে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। সাধারণত ৪১ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করা নিরাপদ, তবে তার বেশি হলে ডাক্তারদের পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মা ও শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে নিয়মিত চেকআপ, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা ও মানসিক শান্তি বজায় রাখা অপরিহার্য। মনে রাখবেন—প্রসব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও সতর্কতা ও সচেতনতা জীবন বাঁচাতে পারে।

প্রশ্নোত্তর –

প্রশ্ন ১: ডেলিভারির ডেট ওভার হওয়া কি স্বাভাবিক?
হ্যাঁ, অনেক সময় ৪০ সপ্তাহ পেরোলেও স্বাভাবিকভাবে প্রসব শুরু হয় না। এটি অস্বাভাবিক নয়।

প্রশ্ন ২: কতদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা নিরাপদ?
সাধারণত ৪১ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করা যায়। এর বেশি হলে ডাক্তার সিদ্ধান্ত নেবেন।

প্রশ্ন ৩: ডেলিভারির ডেট ওভার হলে কি সিজারিয়ান করতেই হবে?
সবসময় নয়। অনেক সময় লেবার ইন্ডিউস করে স্বাভাবিক প্রসব করানো হয়।

প্রশ্ন ৪: শিশুর জন্য ঝুঁকি কী কী হতে পারে?
অক্সিজেনের ঘাটতি, পানি কমে যাওয়া বা শিশুর ওজন বেড়ে যাওয়া।

প্রশ্ন ৫: ডেলিভারির ডেট ওভার হলে মায়ের করণীয় কী?
ডাক্তারকে নিয়মিত দেখানো, শিশুর নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং মানসিকভাবে ইতিবাচক থাকা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
Scroll to Top