নবজাতকের ঢেকুর তোলা-
একটি নবজাতক যখন দুধ খায়, তখন শুধু দুধই নয়, দুধের সাথে বাতাসও গিলে ফেলে। এই বাতাস পেটে জমে গেলে শিশুর অস্বস্তি, কান্না, পেট ফাঁপা এবং হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই শিশুকে খাওয়ানোর পর নবজাতকের ঢেকুর তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু শিশুর আরামই দেয় না, বরং হজম প্রক্রিয়াও স্বাভাবিক রাখে।
নবজাতকের ঢেকুর তোলা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
নবজাতকের ঢেকুর তোলা শিশুর জন্য নানা কারণে উপকারী—
- পেটের গ্যাস কমায়: খাওয়ার সময় গিলে ফেলা বাতাস বের হয়ে যায়।
- হজমে সহায়তা করে: দুধ সহজে হজম হয়।
- অস্বস্তি দূর করে: শিশুর কান্না বা বিরক্তি কমে।
- দুধ বমি হওয়ার ঝুঁকি কমায়: অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্তি পায়।
- ঘুম আরামদায়ক হয়: পেট ফাঁপা বা ব্যথার কারণে ঘুমের ব্যাঘাত হয় না।
নবজাতকের ঢেকুর কখন তুলবেন?-
- প্রতিবার দুধ খাওয়ানোর পর
- যদি খাওয়ানোর মাঝেই শিশু কেঁদে ওঠে বা অস্বস্তি করে
- বোতল ফিড করলে বেশি বার ঢেকুর তুলতে হবে (কারণ তাতে বাতাস বেশি ঢুকে যায়)
- বুকের দুধ খাওয়ালে মাঝেমধ্যে (বিশেষত এক স্তন থেকে আরেক স্তনে পরিবর্তনের সময়) ঢেকুর তুলতে হবে
নবজাতকের ঢেকুর তোলার সঠিক পদ্ধতি-
১. কাঁধে নিয়ে ঢেকুর তোলা
- শিশুকে সোজা করে কাঁধে তুলে নিন
- মাথা আপনার কাঁধে রাখুন
- পিঠে আস্তে আস্তে চাপ দিন বা হাত বুলিয়ে দিন
- একটি কাপড় কাঁধে রাখুন, যাতে বমি হলে কাপড় নোংরা না হয়
২. কোলে বসিয়ে ঢেকুর তোলা
- শিশুকে কোলে বসান
- একটি হাত দিয়ে বুকে ও মাথায় সাপোর্ট দিন
- সামান্য সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে পিঠে আস্তে আস্তে চাপ দিন
৩. শুইয়ে নিয়ে ঢেকুর তোলা
- শিশুকে বুকের ওপর উল্টে শুইয়ে দিন
- মাথা শরীরের চেয়ে সামান্য উঁচুতে রাখুন
- পিঠে আলতোভাবে চাপুন
প্রতিটি পদ্ধতিতেই মাথা ও গলা সঠিকভাবে সাপোর্ট দিতে হবে, কারণ নবজাতকের গলার পেশি এখনো শক্ত নয়।
নবজাতকের ঢেকুর তোলা কতক্ষণ লাগতে পারে?-
ধারণত নবজাতকের ঢেকুর তুলতে ৫–১০ মিনিট যথেষ্ট সময়। তবে কিছু শিশুর ক্ষেত্রে একটু বেশি সময় লাগতে পারে, প্রায় ১৫ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
মনে রাখবেন, যদি এই সময়ের মধ্যেও শিশুর ঢেকুর না ওঠে এবং সে স্বাভাবিকভাবে শান্ত থাকে, অস্বস্তি না করে কিংবা দুধ উগরে না ফেলে—তাহলে বেশি জোর করার দরকার নেই। বরং শিশুকে আস্তে আস্তে কোলে শুইয়ে দিন বা পিঠে হালকা হাত বুলিয়ে দিন। অনেক সময় শিশুর প্রয়োজনীয় বাতাস নিজে থেকেই বেরিয়ে যায়।
নবজাতকের ঢেকুর না উঠলে কী করবেন?-
- অন্য ভঙ্গিতে চেষ্টা করুন
- কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন
- শিশুকে পিঠে শুইয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন
- যদি বারবার সমস্যা হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
নবজাতকের ঢেকুর তোলা নিয়ে মায়েদের সাধারণ ভুল-
- খুব জোরে চাপা বা ঝাঁকানো (শিশুর ক্ষতি হতে পারে)
- দীর্ঘ সময় এক ভঙ্গিতে চেষ্টা করা
- শিশুকে সমর্থন না দিয়ে বসানো
- ঢেকুর না উঠলেও বারবার জোর করা
এসব ভুল এড়ানো উচিত।
নবজাতকের ঢেকুর তোলার উপকারিতা-
- শিশুর কান্না কমে যায়
- শিশুর আরামদায়ক ঘুম হয়
- হজম শক্তি বাড়ে
- গ্যাস, পেট ব্যথা ও অস্বস্তি কমে
- মায়ের মানসিক চাপও কমে যায়
উপসংহার-
নবজাতকের ঢেকুর তোলা প্রতিটি মায়ের জন্য একটি অপরিহার্য কাজ। এটি শিশুর হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে, গ্যাস কমায়, আরাম দেয় এবং ঘুম ভালো করে। সঠিকভাবে ঢেকুর তুলতে পারলে শিশুর কান্না কমে এবং মায়েরও দুশ্চিন্তা কমে।
প্রতিবার দুধ খাওয়ানোর পর শিশুকে ঢেকুর তুলতে সাহায্য করা একটি অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। তবে অতিরিক্ত চাপ না দিয়ে ধীরে ধীরে, ভালোবাসা নিয়ে এই প্রক্রিয়াটি করলে শিশু সুস্থ ও সুখী থাকবে।
নবজাতকের ঢেকুর তোলা নিয়ে সাধারণ প্রশ্ন-
প্রশ্ন ১: নবজাতকের ঢেকুর তোলা কি সবসময় জরুরি?
হ্যাঁ, বিশেষ করে খাওয়ানোর পর ঢেকুর তুললে শিশুর আরাম হয়।
প্রশ্ন ২: ঢেকুর না উঠলে কি সমস্যা হবে?
সব সময় সমস্যা নাও হতে পারে, তবে এতে পেটে গ্যাস জমে অস্বস্তি হতে পারে।
প্রশ্ন ৩: বোতল ফিড ও বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুদের ঢেকুর তোলার নিয়ম কি আলাদা?
বোতল ফিড করলে ঢেকুর তুলতে বেশি গুরুত্ব দিতে হয়, কারণ তাতে বেশি বাতাস ঢোকে।
প্রশ্ন ৪: নবজাতকের ঢেকুর তোলা কতক্ষণ ধরে করতে হয়?
সাধারণত ৫-১০ মিনিট যথেষ্ট।
প্রশ্ন ৫: নবজাতকের ঢেকুর না ওঠা কি কোনো রোগের লক্ষণ?
না, সবসময় নয়। তবে যদি শিশুর অস্বস্তি বা বমি বেশি হয়, ডাক্তারকে দেখানো উচিত।