নবজাতক বাচ্চার পায়খানা: রঙ, গন্ধ, সমস্যা ও সমাধান

নবজাতক বাচ্চার পায়খানা-

শিশু জন্মের পর তার স্বাস্থ্য ও সুস্থতা নিয়ে বাবা-মায়ের কৌতূহলের শেষ থাকে না। বিশেষ করে, নবজাতক বাচ্চার পায়খানা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে—এটি কেমন হওয়া উচিত, কতবার হওয়া স্বাভাবিক, কোন রঙ বা গন্ধ স্বাভাবিক আর কোনটি সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। আসলে নবজাতকের পায়খানা শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বহন করে। সঠিকভাবে জানলে বাবা-মায়েরা অযথা দুশ্চিন্তা এড়াতে পারবেন এবং প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারবেন।

নবজাতক বাচ্চার পায়খানা কেমন হয়?-

শিশুর জন্মের পর প্রথম ২৪-৪৮ ঘণ্টায় যে পায়খানা হয়, তাকে বলা হয় মেকোনিয়াম। এটি ঘন, আঠালো, কালচে-সবুজ রঙের হয়। এটি আসলে গর্ভে থাকার সময় জমে থাকা বর্জ্য পদার্থ। এরপর ধীরে ধীরে মায়ের দুধ বা ফর্মুলা দুধ খাওয়ার কারণে শিশুর পায়খানার রঙ ও ঘনত্ব পরিবর্তিত হয়।

নবজাতক বাচ্চার পায়খানার রঙ ও অর্থ-

  • কালচে-সবুজ (Meconium): জন্মের পর প্রথম কয়েক দিনে স্বাভাবিক।
  • হলুদ সরিষার মতো: মায়ের দুধ খাওয়া শিশুর ক্ষেত্রে স্বাভাবিক।
  • হালকা বাদামী বা ট্যান: ফর্মুলা দুধ খাওয়া শিশুর সাধারণ পায়খানা।
  • সবুজাভ রঙ: শিশুর হজম প্রক্রিয়ায় সামান্য পরিবর্তনের কারণে হতে পারে।
  • লালচে বা রক্ত মিশ্রিত: অস্বাভাবিক, অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • কালো পায়খানা (প্রথম কয়েক দিনের পরেও): এটি অস্বাভাবিক এবং অন্তর্নিহিত সমস্যা নির্দেশ করতে পারে।
  • সাদা বা ধূসর: যকৃতের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।

নবজাতক বাচ্চার পায়খানার গন্ধ-

  • মায়ের দুধ খাওয়া শিশুর পায়খানা সাধারণত হালকা গন্ধযুক্ত।
  • ফর্মুলা দুধ খাওয়া শিশুর পায়খানা তুলনামূলকভাবে বেশি দুর্গন্ধযুক্ত হয়।
  • খুব বাজে গন্ধযুক্ত, পচা ডিমের মতো দুর্গন্ধ হলে তা অন্ত্রের সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে।

নবজাতক বাচ্চার পায়খানার ফ্রিকোয়েন্সি (কতবার হওয়া স্বাভাবিক)-

  • প্রথম সপ্তাহ: দিনে ৪–৮ বার পর্যন্ত পায়খানা স্বাভাবিক।
  • ১ মাস পর: দিনে ২–৫ বার হতে পারে।
  • কিছু ক্ষেত্রে: অনেক শিশু দিনে ১ বার বা ২ দিন পর পরও পায়খানা করে—এটিও স্বাভাবিক, যদি শিশুটি আরাম বোধ করে।

নবজাতক বাচ্চার পায়খানার সমস্যাগুলো-

১. ডায়রিয়া:

  • বারবার পাতলা ও পানির মতো পায়খানা হলে তা ডায়রিয়া।
  • পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) এড়াতে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

২. কোষ্ঠকাঠিন্য:

  • ফর্মুলা দুধ খাওয়া শিশুর মাঝে কোষ্ঠকাঠিন্য বেশি দেখা যায়।
  • দীর্ঘ সময় পায়খানা না হওয়া, শক্ত পায়খানা হওয়া এটির লক্ষণ।

৩. রক্ত মিশ্রিত পায়খানা:

  • মলদ্বারের ছোট ক্ষত, অ্যালার্জি বা অন্ত্রের গুরুতর সমস্যার কারণে হতে পারে।
  • অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

৪. অতিরিক্ত ফেনাযুক্ত বা শ্লেষ্মা মিশ্রিত পায়খানা:

  • হজমজনিত সমস্যা বা সংক্রমণের কারণে হতে পারে।

নবজাতকের পায়খানা নিয়ে কখন চিন্তা করবেন?-

  • পায়খানায় রক্ত দেখা গেলে।
  • সাদা, ধূসর বা খুব গাঢ় কালো পায়খানা হলে।
  • একটানা পাতলা ডায়রিয়া হলে।
  • শিশুর ওজন কমে গেলে বা ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ দেখা দিলে।
  • দীর্ঘ সময় পায়খানা না হলে এবং শিশু অস্থির থাকলে।

নবজাতক বাচ্চার পায়খানা স্বাভাবিক রাখতে করণীয়-

  • শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানো (প্রথম ৬ মাস)।
  • মায়ের খাদ্যাভ্যাস সুষম রাখা।
  • ফর্মুলা দুধ খাওয়ালে সঠিক মাপ ও প্রস্তুত প্রণালী মেনে চলা।
  • শিশুকে পর্যাপ্ত পানি (মায়ের দুধের মাধ্যমেই) সরবরাহ করা।
  • কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।

নবজাতক বাচ্চার পায়খানা নিয়ে মায়েদের সাধারণ দুশ্চিন্তা-

অনেক মা-ই ভাবেন, শিশুর পায়খানা বেশি বা কম হলে সমস্যা আছে কি না। আসলে প্রত্যেক শিশুর শরীর ভিন্ন। কারও দিনে একাধিকবার পায়খানা হওয়া স্বাভাবিক, আবার কারও ২ দিনে একবার হলেও সমস্যা নেই। মূল বিষয় হলো শিশুটি আরামদায়ক আছে কি না, খাওয়া-দাওয়া করছে কি না এবং ওজন ঠিকমতো বাড়ছে কি না।

উপসংহার-

নবজাতক বাচ্চার পায়খানা শিশুর স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। এর রঙ, ঘনত্ব, গন্ধ ও ফ্রিকোয়েন্সি শিশুর হজম ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেয়। যদিও অনেক পরিবর্তন স্বাভাবিক, তবে কিছু লক্ষণ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার ইঙ্গিত দেয়। তাই মায়েদের উচিত সচেতন থাকা এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া।

প্রশ্নউত্তর-

প্রশ্ন ১: নবজাতক বাচ্চার পায়খানা কতবার হওয়া স্বাভাবিক?
উত্তর: প্রথম দিকে দিনে ৪–৮ বার স্বাভাবিক। তবে পরবর্তীতে দিনে ১–৩ বার বা ২ দিনে একবারও হতে পারে।

প্রশ্ন ২: নবজাতকের পায়খানা সবুজ হলে কি চিন্তার কারণ?
উত্তর: সবুজ পায়খানা সাধারণত স্বাভাবিক। তবে যদি ডায়রিয়া, জ্বর বা অস্বাভাবিক গন্ধ থাকে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রশ্ন ৩: বাচ্চার পায়খানায় রক্ত দেখা দিলে কী করবেন?
উত্তর: অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এটি অন্ত্র বা মলদ্বারের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

প্রশ্ন ৪: ফর্মুলা দুধ খাওয়া শিশুর পায়খানা কেমন হয়?
উত্তর: ফর্মুলা দুধ খাওয়া শিশুর পায়খানা সাধারণত গাঢ় হলুদ বা বাদামী রঙের হয় এবং কিছুটা দুর্গন্ধযুক্ত হতে পারে।

প্রশ্ন ৫: নবজাতকের পায়খানা না হলে কি সমস্যা?
উত্তর: ২ দিন পর্যন্ত না হলেও সমস্যা নেই, যদি শিশুটি স্বাভাবিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করে। তবে শিশুটি অস্থির হলে বা দীর্ঘ সময় না হলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

প্রশ্ন ৬: নবজাতকের সাদা বা ধূসর পায়খানা কি বিপজ্জনক?
উত্তর: হ্যাঁ, এটি যকৃত বা পিত্তনালীর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

প্রশ্ন ৭: শিশুর পায়খানা পাতলা হলে কি সবসময় ডায়রিয়া বোঝায়?
উত্তর: সবসময় নয়। মায়ের দুধ খাওয়া শিশুদের পায়খানা স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা পাতলা হয়। তবে বারবার পানি মত হলে তা ডায়রিয়া হতে পারে।

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
Scroll to Top