নবজাতক শিশুর ঘুম: কত ঘন্টা ঘুমায়?-
নতুন মা-বাবাদের সবচেয়ে সাধারণ প্রশ্নগুলোর একটি হলো — “নবজাতক শিশু কত ঘন্টা ঘুমায়?”। জন্মের পরপরই শিশু অধিকাংশ সময় ঘুমিয়ে কাটায়। এটি তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য। সাধারণত নবজাতক দিনে ১৬–১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকে। তবে এই ঘুম কখনো একটানা হয় না, বরং ভাঙা-ভাঙা হয়।
নবজাতকের ঘুমের গুরুত্ব-
নবজাতকের ঘুম তাদের শারীরিক, মানসিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জন্মের পর প্রথম কয়েক মাসে একটি শিশুর প্রতিদিন গড়ে ১৪–১৭ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। এই ঘুম শিশুদের জন্য শুধুমাত্র বিশ্রাম নয়, বরং তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ, স্নায়ুতন্ত্রের দৃঢ়তা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর মূল ভিত্তি।
পর্যাপ্ত ঘুম পেলে নবজাতক শান্ত, সতেজ ও প্রাণবন্ত থাকে। অপর্যাপ্ত ঘুম শিশুর মধ্যে বিরক্তি, কান্না, খাওয়ার অনীহা এবং শারীরিক বৃদ্ধির ধীরগতি ঘটাতে পারে। তাই শিশুদের জন্য নিরাপদ, শান্ত এবং আরামদায়ক পরিবেশে ঘুম নিশ্চিত করা মা-বাবার প্রধান দায়িত্ব।
সংক্ষেপে নবজাতকের ঘুমের গুরুত্ব:
-
শরীর ও পেশির সঠিক বৃদ্ধি
-
মস্তিষ্ক ও স্মৃতিশক্তির উন্নয়ন
-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধি
-
শিশুর মানসিক প্রশান্তি ও সতেজতা
- শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে।
- হাড়, পেশি ও টিস্যুর বৃদ্ধি ঘুমের সময় দ্রুত হয়।
- শিশুর মানসিক প্রশান্তি ও ভবিষ্যতের আচরণে ঘুম বড় ভূমিকা রাখে।
নবজাতক শিশু কত ঘন্টা ঘুমায়: বয়সভেদে ঘুমের সময়সূচি-
শিশুর বয়স | গড় ঘুমের সময় (প্রতি দিন) | ঘুমের ধরন |
---|---|---|
০–১ মাস | ১৬–১৮ ঘণ্টা | ২–৪ ঘণ্টা পরপর ছোট ছোট ঘুম |
১–৩ মাস | ১৫–১৭ ঘণ্টা | দিনে ৩–৪ বার, রাতে দীর্ঘ সময় ঘুম |
৩–৬ মাস | ১৪–১৬ ঘণ্টা | রাতের ঘুম দীর্ঘ হয়, দিনে ২–৩ বার ঘুম |
৬–১২ মাস | ১২–১৪ ঘণ্টা | দিনে ১–২ বার ঘুম, রাতে একটানা ঘুমানোর প্রবণতা |
নবজাতকের ঘুম কেমন হয়?-
- নবজাতকের ঘুম সাধারণত ভাঙা-ভাঙা হয়।
- প্রতিবার ঘুমের দৈর্ঘ্য গড়ে ২–৪ ঘণ্টা।
- শিশু রাত-দিনের পার্থক্য বোঝে না, তাই যেকোনো সময় ঘুমাতে পারে।
- ঘুমের সময় শিশু মাঝে মাঝে হাত-পা নড়াচড়া করে, হালকা আওয়াজ করে বা মুখ নড়ায় — এগুলো স্বাভাবিক।
নবজাতকের ঘুমের ধরন-
১. হালকা ঘুম (REM Sleep)
- শিশুরা বেশি সময় হালকা ঘুমে কাটায়।
- এ সময় মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে এবং শারীরিক বিকাশ ত্বরান্বিত হয়।
২. গভীর ঘুম (Non-REM Sleep)
- শিশুর শরীর সম্পূর্ণ শান্ত থাকে।
- এই সময় শরীর বৃদ্ধি পায় এবং শক্তি সঞ্চিত হয়।
নবজাতকের ঘুম ভাঙার কারণ-
- ক্ষুধা
- ভেজা ডায়াপার
- অস্বস্তিকর পরিবেশ (গরম/ঠান্ডা)
- হঠাৎ শব্দ
- পেটের গ্যাস বা অস্বস্তি
নবজাতকের ঘুমের সমস্যা ও বিপদ চিহ্ন-
অস্বাভাবিক বেশি ঘুম
- নবজাতক যদি ২০ ঘণ্টার বেশি ঘুমায় এবং খাওয়ার সময়ও জাগানো না যায়, তবে এটি ঝুঁকির সংকেত।
অস্বাভাবিক কম ঘুম
- দিনে যদি শিশু ১০ ঘণ্টার কম ঘুমায় এবং সবসময় অস্থির থাকে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ জরুরি।
ঘুমের সময় শ্বাসকষ্ট
- শ্বাস দ্রুত হওয়া, মুখ নীল হয়ে যাওয়া বা বুকের খাঁচা ভেতরে ঢুকে যাওয়া বিপদ চিহ্ন।
নবজাতকের ভালো ঘুম নিশ্চিত করার উপায়-
১. নিরাপদ ও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করা
- শিশুর বিছানা পরিষ্কার, নরম ও নিরাপদ হতে হবে।
- কক্ষের তাপমাত্রা ২৫–২৭°C রাখা ভালো।
২. নিয়মিত স্তন্যপান করানো
- প্রতি ২–৩ ঘণ্টা অন্তর খাওয়ালে শিশু তৃপ্ত হয়ে দীর্ঘক্ষণ ঘুমাবে।
৩. নির্দিষ্ট সময়সূচি তৈরি করা
- প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করা।
- রাতের বেলায় আলো কমিয়ে শান্ত পরিবেশ রাখা।
৪. শিশুকে শান্ত করা
- মায়ের কোল বা হালকা ঝাঁকুনিতে শিশু সহজে ঘুমিয়ে পড়ে।
৫. নিরাপদ ঘুমের অভ্যাস
- শিশু সবসময় চিৎ হয়ে শোয়া উচিত।
- বালিশ, ভারী কম্বল বা খেলনা শিশুর বিছানায় রাখা উচিত নয়।
উপসংহার-
নবজাতক শিশু কত ঘন্টা ঘুমায় তা জানা বাবা-মায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত নবজাতক দিনে ১৬–১৮ ঘণ্টা ঘুমালেও এই সময় বয়সভেদে পরিবর্তিত হয়। তবে অস্বাভাবিক কম বা বেশি ঘুম, শ্বাসকষ্ট বা খাওয়ার সময় জেগে না ওঠা — এগুলো বিপদের সংকেত হতে পারে। তাই নিয়মিত শিশুর ঘুম পর্যবেক্ষণ করা, নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা এবং প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
প্রশ্নত্তোর-
১. নবজাতক শিশু কত ঘন্টা ঘুমায় সাধারণত?
নবজাতক প্রতিদিন ১৬–১৮ ঘণ্টা ঘুমায়, তবে তা ভাঙা-ভাঙা হয়।
২. নবজাতক কি রাতদিন একটানা ঘুমাতে পারে?
না, নবজাতক প্রতি ২–৪ ঘণ্টা পরপর ঘুম থেকে জেগে ওঠে খাওয়ার জন্য।
৩. নবজাতকের ঘুম ভাঙলে কি সঙ্গে সঙ্গে খাওয়াতে হবে?
হ্যাঁ, নবজাতক জেগে উঠলে সাধারণত ক্ষুধার কারণেই ওঠে, তাই খাওয়ানো উচিত।
৪. নবজাতক দিনে কতবার ঘুমায়?
প্রথম মাসে নবজাতক দিনে ৫–৭ বার ছোট ছোট ঘুম নেয়।
৫. নবজাতক যদি অনেক ঘুমায় তবে কি সমস্যা?
অতিরিক্ত ঘুম বিপদ সংকেত হতে পারে, বিশেষ করে যদি শিশুকে খাওয়ার সময়ও জাগানো না যায়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।