শিশুর লোহা ঘাটতি-
শিশু জন্মের পরপরই মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় সঞ্চিত কিছু প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ নিয়ে আসে। এর মধ্যে অন্যতম হলো লোহা (Iron)। শিশুর শরীরে জন্মের সময় যে লোহা মজুদ থাকে তা সাধারণত প্রথম ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যে ফুরিয়ে যায়। এ কারণে শিশুকে সময়মতো সঠিক পুষ্টিকর খাবার ও দুধের মাধ্যমে পর্যাপ্ত লোহা সরবরাহ করা অত্যন্ত জরুরি।
কেন শিশুর দেহে লোহা গুরুত্বপূর্ণ?-
লোহা রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরি করে, যা শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সামগ্রিক শারীরিক বিকাশে লোহা অপরিহার্য।
যদি শিশুর শরীরে পর্যাপ্ত লোহা না থাকে, তবে তা তার বৃদ্ধি এবং মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
জন্মের পর শিশুর লোহা কতদিন টিকে থাকে?-
- পূর্ণ-মেয়াদি শিশু (Full-term baby): জন্মের সময় শরীরে যে লোহা সঞ্চিত থাকে তা প্রায় ৪-৬ মাস পর্যন্ত চলে।
- অপূর্ণ-মেয়াদি শিশু (Preterm baby): তাদের ক্ষেত্রে লোহা সঞ্চয় তুলনামূলকভাবে কম থাকে এবং সাধারণত ২-৩ মাসের মধ্যেই ফুরিয়ে যায়।
শিশুর লোহা ঘাটতির কারণ-
- সময়ের আগে জন্ম (Premature birth)
- কম ওজন নিয়ে জন্ম
- জন্মের পর শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো, তবে মায়ের শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকা
- শিশুর দ্রুত বৃদ্ধি
- লোহা সমৃদ্ধ খাবারের অভাব
শিশুর লোহা পূরণের উপায়-
১. বুকের দুধ
প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধই শিশুর জন্য যথেষ্ট। বুকের দুধে থাকা লোহা সহজে হজম হয় এবং শিশুর শরীরে শোষিত হয়।
২. পরিপূরক খাবার (৬ মাস পর থেকে)
৬ মাস বয়সের পর থেকে শিশুকে লোহা সমৃদ্ধ খাবার দেওয়া উচিত, যেমন –
- ডিমের কুসুম
- মাংস (গরু, মুরগি, মাছ)
- শাকসবজি (পালং শাক, কচু শাক)
- ডাল
- কলিজা
- আটা, ওটস ও শস্যজাতীয় খাবার
৩. আয়রন সাপ্লিমেন্ট
যদি ডাক্তার মনে করেন যে শিশুর শরীরে লোহা ঘাটতি আছে, তবে Iron supplement দেওয়া হতে পারে। তবে এটি অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দিতে হবে।
শিশুর লোহা ঘাটতি রোধে করণীয়-
- গর্ভাবস্থায় মা যেন পর্যাপ্ত লোহা গ্রহণ করেন
- শিশুর ৬ মাস বয়স থেকে সময়মতো পরিপূরক খাবার শুরু করা
- শিশুর খাবারে লোহা সমৃদ্ধ খাদ্য যোগ করা
- শিশুকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নিয়ে যাওয়া
উপসংহার-
জন্মের কত মাসের মধ্যে শিশুর দেহে সঞ্চিত লোহা ফুরিয়ে যায় এই প্রশ্নের উত্তর হলো সাধারণত ৪-৬ মাস। অপূর্ণ-মেয়াদি শিশুর ক্ষেত্রে এটি আরও দ্রুত ঘটে। শিশুর সুস্থ শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য লোহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই বুকের দুধের পাশাপাশি ৬ মাস বয়স থেকে শিশুকে লোহা সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো উচিত এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রশ্নোত্তর-
প্রশ্ন ১: জন্মের কত মাসের মধ্যে শিশুর দেহে সঞ্চিত লোহা ফুরিয়ে যায়?
– সাধারণত পূর্ণ-মেয়াদি শিশুর ক্ষেত্রে ৪-৬ মাসের মধ্যে এবং অপূর্ণ-মেয়াদি শিশুর ক্ষেত্রে ২-৩ মাসের মধ্যেই ফুরিয়ে যায়।
প্রশ্ন ২: শিশুর শরীরে লোহা কমে গেলে কী হয়?
-শিশুর বৃদ্ধি ধীর হয়, মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, দুর্বলতা ও ফ্যাকাশে ভাব দেখা দেয়।
প্রশ্ন ৩: শিশুকে কখন লোহা সমৃদ্ধ খাবার দেওয়া শুরু করা উচিত?
– ৬ মাস বয়স থেকে শিশুকে ধীরে ধীরে লোহা সমৃদ্ধ পরিপূরক খাবার দেওয়া উচিত।
প্রশ্ন ৪: বুকের দুধ কি শিশুর লোহা ঘাটতি পূরণ করে?
– হ্যাঁ, তবে জন্মের পর প্রথম ৪-৬ মাস পর্যন্ত বুকের দুধ যথেষ্ট, তারপর খাবারের মাধ্যমে লোহা যোগ করা জরুরি।
প্রশ্ন ৫: শিশুর লোহা ঘাটতি কি সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা সম্ভব?
-হ্যাঁ, যদি গর্ভাবস্থায় মায়ের সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা হয় এবং জন্মের পর শিশুকে সময়মতো বুকের দুধ ও পরিপূরক খাবার দেওয়া হয়।