শিশুর উপর সৎ মায়ের প্রভাব: মানসিক বিকাশ, আচরণ ও করণীয়

শিশুর উপর সৎ মায়ের প্রভাব-

শিশু জন্ম থেকে পরিবারকেন্দ্রিক এক আবেগী পরিবেশে বেড়ে ওঠে। কিন্তু পরিস্থিতি সবসময় একইরকম থাকে না। কখনো বিচ্ছেদ, মৃত্যু বা অন্যান্য কারণে শিশুর জীবনে নতুন একজন মানুষ—সৎ মা—প্রবেশ করে। এসময় শিশুর মানসিক ও আবেগীয় বিকাশে নানা পরিবর্তন আসে। অনেক সময় এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, আবার কখনো নেতিবাচক অভিজ্ঞতাও তৈরি হতে পারে। তাই অভিভাবক ও পরিবারকে সচেতন থাকতে হবে।

সৎ মা ও শিশুর সম্পর্ক: শুরুটা কেমন হয়?-

  • শিশু যখন নতুন একজন মায়ের সাথে পরিচিত হয়, তখন তার ভেতরে এক ধরণের দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে।
  • নিজের জন্মদাত্রী মায়ের জায়গায় অন্য কাউকে মেনে নিতে শিশুর কষ্ট হয়।
  • সৎ মা যদি ভালোবাসা, ধৈর্য ও যত্ন দিয়ে সম্পর্ক গড়ে তোলেন, তবে ধীরে ধীরে শিশু তাকে গ্রহণ করতে শেখে।

শিশুর উপর সৎ মায়ের ইতিবাচক প্রভাব-

সব সৎ মা-সন্তানের সম্পর্ক যে নেতিবাচক হবে তা নয়। অনেক ক্ষেত্রে সৎ মা হয়ে ওঠেন সন্তানের সবচেয়ে বড় ভরসা।

  • আবেগীয় নিরাপত্তা: সৎ মা স্নেহশীল হলে শিশু নতুন করে ভালোবাসা ও নিরাপত্তা খুঁজে পায়।
  • মানসিক বিকাশ: সৎ মায়ের সহায়তায় শিশুর আত্মবিশ্বাস ও সামাজিক দক্ষতা বাড়ে।
  • শিক্ষাগত উন্নতি: সৎ মা যদি পড়াশোনায় সাহায্য করেন তবে শিশুর পড়াশোনার মান উন্নত হয়।
  • সামাজিক সম্পর্ক: সৎ মা যদি পরিবারে সমন্বয় আনেন তবে শিশু নতুন পরিবেশে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে।

শিশুর উপর সৎ মায়ের নেতিবাচক প্রভাব-

দুঃখজনকভাবে অনেক সময় সৎ মা-সন্তান সম্পর্ক নেতিবাচক হয়ে ওঠে।

  • অবহেলা ও বৈষম্য: নিজের সন্তান ও সৎ সন্তানকে ভিন্নভাবে দেখলে শিশুর মনে আঘাত লাগে।
  • মানসিক চাপ: অবহেলা বা বকাঝকা শিশুকে হতাশাগ্রস্ত করতে পারে।
  • আত্মসম্মানহানি: সবসময় দোষারোপ করলে শিশুর আত্মসম্মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • আচরণগত সমস্যা: সৎ মায়ের প্রতি অভিমান শিশুকে একগুঁয়ে বা আক্রমণাত্মক করে তুলতে পারে।

শিশুর আবেগীয় বিকাশে সৎ মায়ের ভূমিকা-

  • শিশুদের সবচেয়ে বড় চাহিদা হলো ভালোবাসা ও গ্রহণযোগ্যতা।
  • সৎ মা যদি তাকে আপন করে নেন, তবে শিশু নিজেকে মূল্যবান মনে করে।
  • ভালোবাসাপূর্ণ আচরণ শিশুর মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে।

সৎ মা-সন্তান সম্পর্ক গঠনে করণীয়-

        সময় দেওয়া: শিশুর সাথে সময় কাটানো সম্পর্ক গড়ার প্রথম ধাপ।
       শোনা ও বোঝা: শিশুর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা উচিত।
       ভালোবাসা প্রদর্শন: নিয়মিত আদর, প্রশংসা ও উৎসাহ শিশুর মনে আস্থা তৈরি করে।
       বৈষম্য না করা: নিজের সন্তান ও সৎ সন্তানকে সমানভাবে ভালোবাসা।
       ধৈর্য ধরা: শিশুকে জোর করে ভালোবাসতে বাধ্য না করে ধীরে ধীরে সম্পর্ক গড়তে হবে।

শিশুর উপর সৎ মায়ের প্রভাব: সমাজ ও সংস্কৃতির ভূমিকা-

  • অনেক সংস্কৃতিতে সৎ মাকে নেতিবাচকভাবে দেখা হয়।
  • পরিবার ও সমাজ যদি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নেয়, তবে শিশুর মানসিক চাপ কমে।
  • আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর সহানুভূতি শিশুকে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে সহায়তা করে।

শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন-

  • সৎ মা-সন্তান সম্পর্কের টানাপোড়েন শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে।
  • পরিবারে সুস্থ যোগাযোগ শিশুর উদ্বেগ কমায়।
  • প্রয়োজনে কাউন্সেলিং শিশুর মানসিক উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে।

সৎ মা ও বাবার যৌথ ভূমিকা-

  • বাবা যদি নিরপেক্ষ থাকেন তবে শিশু আস্থাহীন হয়ে পড়ে।
  • বাবাকে অবশ্যই দুই পক্ষের মধ্যে সমন্বয়ক হয়ে উঠতে হবে।
  • সৎ মাকে সহায়তা করলে সম্পর্ক দ্রুত উন্নত হয়।

শিশুর উপর সৎ মায়ের প্রভাব কমাতে বাবা-মার করণীয়-

  • শিশুর সাথে খোলামেলা আলোচনা করা।
  • পরিবারে ভালোবাসাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা।
  • শিশুর অনুভূতি গুরুত্ব দেওয়া।
  • দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলা।

উপসংহার-

শিশুর উপর সৎ মায়ের প্রভাব কখনো ইতিবাচক আবার কখনো নেতিবাচক হতে পারে। মূল বিষয় হলো, সৎ মা যদি ভালোবাসা, ধৈর্য ও সমান আচরণ বজায় রাখেন তবে তিনি শিশুর জীবনে এক মহান ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারেন। অন্যদিকে অবহেলা, বৈষম্য ও কঠোরতা শিশুর মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই পরিবার, বাবা এবং সমাজের উচিত সৎ মা ও শিশুর সম্পর্ককে ইতিবাচকভাবে গড়ে তুলতে সহযোগিতা করা।

প্রশ্নোত্তর-

প্রশ্ন ১: শিশুর উপর সৎ মায়ের প্রভাব কি সবসময় নেতিবাচক হয়?
উত্তর: না, সবসময় নয়। সৎ মা যদি ভালোবাসা, ধৈর্য ও সমতা বজায় রাখেন তবে সম্পর্ক ইতিবাচক হতে পারে।

প্রশ্ন ২: সৎ মায়ের সাথে শিশুর সম্পর্ক গড়তে কত সময় লাগে?
উত্তর: এটি নির্ভর করে শিশুর বয়স, স্বভাব ও পরিবেশের উপর। সাধারণত কয়েক মাস থেকে কয়েক বছরও লাগতে পারে।

প্রশ্ন ৩: সৎ মা-সন্তান সম্পর্ক উন্নত করার সেরা উপায় কী?
উত্তর: শিশুকে সময় দেওয়া, ভালোবাসা দেখানো এবং সমান আচরণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন ৪: যদি সৎ মা শিশুর প্রতি অবহেলা করেন তবে কী করা উচিত?
উত্তর: বাবার উচিত বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা, প্রয়োজনে পারিবারিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা।

প্রশ্ন ৫: সৎ মা-সন্তান সম্পর্কের সমস্যায় কাউন্সেলিং কতটা কার্যকর?
উত্তর: খুবই কার্যকর। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে শিশু ও সৎ মা উভয়েই নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে, যা সম্পর্ক উন্নতিতে সাহায্য করে।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
Scroll to Top