নবজাতকের হাম: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও সঠিক যত্ন

নবজাতকের হাম-

নবজাতক শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এখনও পুরোপুরি গড়ে ওঠে না। ফলে তারা সহজেই বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এর মধ্যে হাম (Measles) একটি অন্যতম সংক্রামক রোগ। হাম সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং সময়মতো সঠিক চিকিৎসা ও যত্ন না নিলে জটিলতা তৈরি হতে পারে। অনেক অভিভাবকই উদ্বিগ্ন থাকেন—নবজাতকের হাম হলে করণীয় কী?

এই ব্লগে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব—হাম কী, এর কারণ, লক্ষণ, জটিলতা, প্রতিরোধের উপায় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—নবজাতকের হাম হলে করণীয়

হাম কী?-

হাম একটি ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ, যা Measles virus দ্বারা হয়। এটি এক ধরনের শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং আক্রান্ত শিশুর কাশি, হাঁচি বা লালার মাধ্যমে অন্য শিশুর মধ্যে সংক্রমণ ঘটায়। নবজাতকরা বিশেষভাবে ঝুঁকিতে থাকে কারণ তাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল।

নবজাতকের হাম হওয়ার কারণ-

  • ভাইরাসজনিত সংক্রমণ – হাম মূলত সংক্রমিত শিশুর হাঁচি, কাশি বা নাক-মুখের লালার মাধ্যমে ছড়ায়।
  • দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা – নবজাতকের শরীর রোগ প্রতিরোধে সক্ষম নয়, তাই সহজেই হাম আক্রান্ত হতে পারে।
  • টিকা না নেওয়া – সাধারণত ৯ মাস বয়সের আগে হাম টিকা দেওয়া হয় না। তাই নবজাতকরা টিকা নেওয়ার সুযোগ পায় না এবং ঝুঁকিতে থাকে।
  • অসাস্থ্যকর পরিবেশ – জনবহুল বা অপরিষ্কার পরিবেশে হাম দ্রুত ছড়ায়।

নবজাতকের হামের লক্ষণ-

হামের প্রাথমিক ও পরবর্তী লক্ষণগুলো জানা খুবই জরুরি।

  • হালকা জ্বর থেকে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে উচ্চ জ্বরে রূপ নেয়
  • কাশি, সর্দি ও নাক দিয়ে পানি পড়া
  • চোখ লাল হওয়া ও পানি পড়া
  • ক্ষুধা কমে যাওয়া ও দুর্বলতা
  • শরীরে ছোট লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া
  • মুখের ভেতরে ছোট সাদা দাগ (Koplik spots)
  • শিশুর বিরক্তি, কান্না বা ঘুমের সমস্যা

নবজাতকের হাম হলে করণীয়-

যদি আপনার নবজাতক হাম আক্রান্ত হয়, আতঙ্কিত না হয়ে সঠিক যত্ন নেওয়া জরুরি।

  • চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
    নবজাতকের হাম হলে প্রথম ও প্রধান করণীয় হলো দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া। হাম সাধারণত সাপোর্টিভ চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়, তবে ডাক্তার প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ দিতে পারেন।
  • শিশুকে বিশ্রামে রাখুন
    হাম আক্রান্ত শিশু অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই তাকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে।
  • শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করুন
    হাম হলে নবজাতকের শরীরে পানিশূন্যতা হতে পারে। তাই নিয়মিত মায়ের দুধ খাওয়ানো অত্যন্ত জরুরি।
  • পুষ্টিকর খাবার (যদি বয়স উপযোগী হয়)
    নবজাতকের ক্ষেত্রে মায়ের দুধই প্রধান খাদ্য। এটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • শিশুর শরীর ঠান্ডা-গরম নিয়ন্ত্রণ করুন
    জ্বর বেশি হলে শিশুকে হালকা গরম পানিতে গা মুছিয়ে দিতে পারেন। ওষুধের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে চলুন।
  • ভিটামিন এ সাপ্লিমেন্ট
    হাম আক্রান্ত শিশুকে অনেক সময় ডাক্তার ভিটামিন এ সিরাপ দেন, কারণ এটি চোখের জটিলতা কমায় এবং দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে।
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
    শিশুর শরীর, পোশাক ও আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখলে সংক্রমণ কমে।
  • শিশুকে আলাদা রাখুন
    হাম অত্যন্ত সংক্রামক। তাই অন্য শিশুদের থেকে আক্রান্ত শিশুকে আলাদা রাখতে হবে।

নবজাতকের হাম থেকে কী কী জটিলতা হতে পারে?-

হাম সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে নানা জটিলতা তৈরি করতে পারে। যেমন:

  • নিউমোনিয়া
  • ডায়রিয়া
  • কান পাকা
  • অপুষ্টি
  • চোখের জটিলতা (অন্ধত্ব পর্যন্ত হতে পারে)
  • খিঁচুনি বা মস্তিষ্কে প্রদাহ (Encephalitis)

নবজাতকের হাম প্রতিরোধের উপায়-

হাম হলে চিকিৎসা করা যায়, তবে প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

  • টিকা
    হাম প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো টিকা। বাংলাদেশে Expanded Programme on Immunization (EPI)-এর মাধ্যমে ৯ মাস বয়সে প্রথম ডোজ এবং ১৫ মাস বয়সে দ্বিতীয় ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দেওয়া হয়।
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
    সংক্রমণ এড়াতে শিশুর পরিবেশ পরিষ্কার রাখা জরুরি।
  • সুস্থ অভিভাবকের যত্ন
    হাম আক্রান্ত কেউ নবজাতকের কাছাকাছি গেলে সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই শিশুর কাছে অসুস্থ ব্যক্তিকে না যেতে দেওয়া ভালো।
  • শিশুকে পর্যাপ্ত মায়ের দুধ খাওয়ানো
    মায়ের দুধ নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

নবজাতকের হাম হলে করণীয়: ঘরোয়া যত্ন-

  • শিশুকে সবসময় আরামদায়ক পরিবেশে রাখুন।
  • ঘরের ভেতর পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচল নিশ্চিত করুন।
  • শিশুর চোখে আলো না দেওয়ার চেষ্টা করুন, কারণ হামের সময় চোখে আলো সহ্য করতে কষ্ট হয়।
  • জ্বর থাকলে শিশুকে গরম কাপড়ে না জড়িয়ে হালকা পোশাক দিন।

নবজাতকের হাম হলে করণীয়: অভিভাবকের করণীয় বিষয়-

  • নিয়মিত শিশুর তাপমাত্রা মাপুন।
  • শিশুর খাওয়ার অভ্যাস খেয়াল রাখুন।
  • শিশুর শরীরে নতুন কোনো ফুসকুড়ি বা রক্তক্ষরণ হলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান।
  • কখনোই নিজের মতো করে ওষুধ দেবেন না।

উপসংহার-

নবজাতকের হাম একটি গুরুতর সংক্রামক রোগ, তবে আতঙ্কিত না হয়ে সঠিক যত্ন নেওয়া সবচেয়ে জরুরি। নবজাতকের হাম হলে করণীয় হলো দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া, শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়া, মায়ের দুধ খাওয়ানো এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে হাম থেকে সৃষ্ট জটিলতা এড়ানো যায় এবং শিশুর সুস্থ বৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব।

 নবজাতকের হাম হলে করণীয় নিয়ে সাধারণ প্রশ্ন-

প্রশ্ন ১: নবজাতকের হাম কি খুব বিপজ্জনক?
উত্তর: হ্যাঁ, নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকায় হাম বিপজ্জনক হতে পারে। তবে সঠিক যত্ন ও চিকিৎসায় শিশুকে সুস্থ রাখা সম্ভব।

প্রশ্ন ২: হাম হলে কীভাবে বুঝব?
উত্তর: জ্বর, কাশি, সর্দি, চোখ লাল হওয়া এবং শরীরে লালচে ফুসকুড়ি উঠলে হাম হতে পারে।

প্রশ্ন ৩: নবজাতক কি হাম টিকা নিতে পারে?
উত্তর: সাধারণত ৯ মাসের আগে হাম টিকা দেওয়া হয় না। তাই নবজাতক হাম প্রতিরোধে অভিভাবকের সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি।

প্রশ্ন ৪: হাম হলে শিশুকে কী খাওয়ানো উচিত?
উত্তর: নবজাতকের জন্য মায়ের দুধই সর্বোত্তম। এটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

প্রশ্ন ৫: হাম হলে শিশুর জ্বর কীভাবে কমানো যায়?
উত্তর: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে। এছাড়া হালকা গরম পানিতে শরীর মুছে দেওয়া যেতে পারে।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
Scroll to Top