চার মাসের শিশুর যত্ন: সঠিক খাওয়ানো, ঘুম ও বিকাশের ধাপ

চার মাসের শিশুর যত্ন-

শিশুর জন্মের প্রথম ছয় মাসের প্রতিটি ধাপই তার ভবিষ্যৎ বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে চার মাসের শিশুর যত্ন নিয়ে অভিভাবকদের সচেতন থাকা উচিত, কারণ এসময়ে শিশু দ্রুত শারীরিক ও মানসিকভাবে বিকশিত হয়। এই সময় শিশুর খাওয়ার অভ্যাস, ঘুমের ধরণ, আবেগীয় প্রতিক্রিয়া এবং খেলাধুলার মাধ্যমে নতুন নতুন দক্ষতা তৈরি হতে থাকে।

চলুন দেখে নেওয়া যাক চার মাসের শিশুর যত্নে কোন কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি।

চার মাসের শিশুর শারীরিক বিকাশ-

  • চার মাস বয়সে শিশুর গড় ওজন জন্মের ওজনের প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।
  • শিশুর ঘাড় ও পিঠের পেশি শক্ত হতে থাকে।
  • পেটের ওপর শোয়ালে মাথা ও বুক তুলতে সক্ষম হয়।
  • খেলনা ধরতে ও মুখের দিকে নিতে চেষ্টা করে।
  • হাত-পায়ের সমন্বয় উন্নত হয়।

চার মাসের শিশুর মানসিক বিকাশ-

  • শিশুর হাসি এখন আরও সচেতন ও সামাজিক হয়ে ওঠে।
  • মায়ের বা বাবার কণ্ঠ শুনে আনন্দ প্রকাশ করে।
  • অচেনা মানুষের দিকে তাকিয়ে কিছুটা অচেনাভাব প্রকাশ করতে পারে।
  • কান্না ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের শব্দ করে নিজের আবেগ প্রকাশ করে।

চার মাসের শিশুর ইন্দ্রিয় বিকাশ-

  • উজ্জ্বল রঙের খেলনায় মনোযোগ ধরে রাখে।
  • চোখ দিয়ে একটি বস্তু থেকে আরেকটি বস্তু অনুসরণ করতে পারে।
  • শব্দের উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করে।
  • নিজের হাত-পায়ের দিকে তাকিয়ে আনন্দ পায়।

চার মাসের শিশুর খাওয়ানো-

  • এখনো শিশুর প্রধান খাবার মায়ের বুকের দুধ।
  • শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানোই শিশুর জন্য সর্বোত্তম।
  • ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দিতে হবে।
  • এসময়ে এখনো কোনো শক্ত খাবার দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

চার মাসের শিশুর ঘুমের ধরন-

  • চার মাস বয়সে শিশুর প্রতিদিন প্রায় ১২–১৫ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়।
  • দিনের বেলা ছোট ছোট ঘুম এবং রাতে দীর্ঘ সময় ঘুমায়।
  • কিছু শিশু রাতে ৫-৬ ঘণ্টা একটানা ঘুমাতে পারে।
  • ঘুমের রুটিন তৈরি করতে এই সময়টা গুরুত্বপূর্ণ।

চার মাসের শিশুর খেলাধুলা ও যোগাযোগ-

  • শিশুর সঙ্গে গান গাওয়া, গল্প বলা এবং কথা বলা তার বিকাশে সাহায্য করে।
  • খেলনা ঝুলিয়ে দিলে তা ধরার চেষ্টা করে।
  • আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে আনন্দ পায়।
  • পেটের ওপর শোয়ালে খেলাধুলার মাধ্যমে তার ঘাড় ও পিঠের পেশি শক্ত হয়।

চার মাসের শিশুর নিরাপত্তা-

  • এসময় শিশুকে কখনো একা বিছানায় বা উঁচু জায়গায় রাখা উচিত নয়।
  • খেলনা অবশ্যই নিরাপদ ও বড় আকারের হতে হবে, যাতে গিলে ফেলতে না পারে।
  • ঘরের পরিবেশ পরিষ্কার রাখা জরুরি।
  • শিশুর হাতের নাগালে ধারালো বা বিপজ্জনক কিছু রাখা উচিত নয়।

চার মাসের শিশুর টিকাদান (বাংলাদেশের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি অনুযায়ী)-

টিকার নাম কোন রোগ থেকে সুরক্ষা দেয় কিভাবে দেওয়া হয়
ডিপথেরিয়া, টিটেনাস ও পার্টুসিস (DTP) ডিপথেরিয়া, ধনুষ্টঙ্কার ও হুপিং কাশি ইনজেকশন
পোলিও (OPV/IPV) পোলিওমাইলাইটিস (পঙ্গুত্ব) মুখে খাওয়ানো ড্রপ / ইনজেকশন
Hib টিকা হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি সংক্রমণ (মেনিনজাইটিস, নিউমোনিয়া) ইনজেকশন
হেপাটাইটিস বি (Hep-B) হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ইনজেকশন
পেন্টাভ্যালেন্ট (যদি কম্বিনেশন টিকা দেওয়া হয়) DTP, Hib, Hep-B একসাথে সুরক্ষা ইনজেকশন

এসব টিকা শিশুকে মারাত্মক সংক্রামক রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।

চার মাসের শিশুর যত্নে অভিভাবকের করণীয়-

  • শিশুর সঙ্গে প্রতিদিন সময় কাটানো।
  • খেলাধুলা ও সাড়া দেওয়ার মাধ্যমে তার মানসিক বিকাশে সহায়তা করা।
  • বুকের দুধ খাওয়ানো অব্যাহত রাখা।
  • ঘুমের জন্য শান্ত ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা।
  • সময়মতো টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা।

সতর্ক সংকেত যা খেয়াল রাখতে হবে-

  • শিশুর চোখে চোখ না রাখা বা হাসি না দেওয়া।
  • কোনো শব্দ বা শব্দের উৎসে সাড়া না দেওয়া।
  • খেলনা ধরতে না চাওয়া।
  • অতিরিক্ত দুর্বল বা অস্বাভাবিকভাবে চুপচাপ থাকা।

এমন কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

উপসংহার-

চার মাসের শিশুর যত্ন সঠিকভাবে নেওয়া হলে তার ভবিষ্যৎ শারীরিক ও মানসিক বিকাশ অনেক বেশি ইতিবাচক হয়। এসময় শিশুর খাওয়ানো, ঘুম, টিকাদান ও নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকদের সচেতন থাকা উচিত। পাশাপাশি শিশুর সঙ্গে নিয়মিত কথা বলা, খেলা করা এবং ভালোবাসা প্রকাশ করা তার আবেগীয় বিকাশে অসাধারণ ভূমিকা রাখে।

প্রশ্নোত্তর-

প্রশ্ন ১: চার মাসে কি শিশুকে শক্ত খাবার দেওয়া যায়?
উত্তর: না, চার মাসে শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধ দেওয়া উচিত। শক্ত খাবার ৬ মাসের পর থেকে শুরু করা উচিত।

প্রশ্ন ২: চার মাসে শিশুর স্বাভাবিক ওজন কত হওয়া উচিত?
উত্তর: সাধারণত জন্মের সময়কার ওজনের দ্বিগুণ হয়, তবে এটি শিশুভেদে ভিন্ন হতে পারে।

প্রশ্ন ৩: ৪ মাস বয়সী শিশু দিনে কত ঘণ্টা ঘুমায়?
উত্তর: প্রায় ১২–১৫ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়।

প্রশ্ন ৪: ৪ মাসে শিশুর বিকাশের প্রধান মাইলস্টোন কী কী?
উত্তর: মাথা তুলতে পারা, খেলনা ধরতে চেষ্টা করা, হাসি দেওয়া, শব্দ শুনে প্রতিক্রিয়া করা ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৫: চার মাসে শিশুকে কীভাবে খেলার মাধ্যমে উৎসাহিত করা যায়?
উত্তর: রঙিন খেলনা, গান, গল্প এবং আয়নার সামনে সময় কাটানো শিশুর জন্য কার্যকরী।

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
Scroll to Top