শিশুর দাঁতে সমস্যা কী-
শিশুর দাঁতে সমস্যা বলতে সাধারণত দাঁত ওঠার সময় হওয়া অস্বস্তি, দাঁতের ক্ষয়, মাড়ি ফুলে যাওয়া, ব্যথা বা মুখের ভেতর সংক্রমণকে বোঝানো হয়। দাঁত ওঠা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও এর সময় অনেক শিশু অস্বস্তিতে ভোগে এবং নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়।
শিশুর দাঁত ওঠার সময়কাল-
সাধারণত শিশুর প্রথম দাঁত ওঠে ৬ মাস বয়সে। তবে কারও ক্ষেত্রে ৪ মাসে আবার কারও ক্ষেত্রে ১২ মাসেও দাঁত উঠতে পারে। ২ থেকে আড়াই বছর বয়সের মধ্যে শিশুর ২০টি দুধ দাঁত পুরোপুরি বের হয়ে যায়। দাঁত ওঠার সময়টিতেই দাঁতের সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায়।
শিশুর দাঁতে সমস্যার সাধারণ লক্ষণ-
- মাড়ি ফুলে যাওয়া
- দাঁত ওঠার সময় ব্যথা
- লালা ঝরা বেড়ে যাওয়া
- শিশুর খিটখিটে মেজাজ
- জ্বর বা ডায়রিয়া হওয়া
- মুখে বা দাঁতে দুর্গন্ধ হওয়া
- দাঁতের ক্ষয় হওয়া
- দাঁত ওঠায় দেরি হওয়া
শিশুর দাঁতে সমস্যার কারণ-
শিশুর দাঁতের সমস্যা হওয়ার পেছনে নানা কারণ কাজ করে। যেমন –
- দুধ বা খাবারের অবশিষ্ট দাঁতে জমা হওয়া
- দাঁত ওঠার সময় মাড়ি প্রদাহ
- অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়া
- অপর্যাপ্ত দাঁতের যত্ন
- মুখে জীবাণু সংক্রমণ
- ভিটামিন ও খনিজের অভাব
দাঁত ওঠার সময় শিশুর অস্বস্তি-
দাঁত ওঠার সময় শিশুর মাড়িতে ব্যথা হয় এবং শিশুটি খিটখিটে হয়ে যায়। অনেক সময় লালা ঝরা বাড়ে, মাড়ি কামড়াতে চায় এবং খাবার খেতে অনীহা দেখা দেয়। এ সময় শিশু কানের ব্যথার মতো আচরণও করতে পারে।
শিশুর দাঁতের ক্ষয়-
অপর্যাপ্ত যত্নের কারণে শিশুদের দাঁত খুব সহজে ক্ষয়ে যায়। বিশেষ করে রাতে দুধ খাওয়ার পর দাঁত পরিষ্কার না করলে দাঁতের গর্ত বা ক্যাভিটি হতে পারে। দাঁতের ক্ষয়ের কারণে দাঁতে ব্যথা হয় এবং খাওয়ায় অসুবিধা হয়।
শিশুর দাঁত ওঠায় দেরি হওয়া-
অনেক শিশুর দাঁত ওঠায় দেরি হয়। সাধারণত ১২ মাসের পরেও দাঁত না উঠলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এটি জেনেটিক কারণে বা পুষ্টির অভাবে হতে পারে।
শিশুর দাঁতের সংক্রমণ-
দাঁতে জীবাণু সংক্রমণ হলে দাঁত ব্যথা, মাড়ি ফুলে যাওয়া ও দুর্গন্ধ দেখা দেয়। কখনও পুঁজও হতে পারে। এ ধরনের সংক্রমণ হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
শিশুর দাঁতে ব্যথা হলে করণীয়-
- মাড়িতে হালকা ঠান্ডা চামচ বা টিথার লাগানো
- পরিষ্কার আঙুল দিয়ে মাড়ি ম্যাসাজ করা
- শিশুকে বেশি করে পানি খাওয়ানো
- চিকিৎসকের নির্দেশে প্রয়োজনে ব্যথানাশক দেওয়া
শিশুর দাঁতে সমস্যা প্রতিরোধ-
- প্রতিদিন দাঁত পরিষ্কার করা
- রাতে দুধ খাওয়ানোর পর দাঁত মুছে দেওয়া
- মিষ্টি ও চকলেট কম খাওয়ানো
- নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ করা
- শিশুকে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো
শিশুর দাঁতের যত্ন-
-
শিশুর প্রথম দাঁত ওঠার পর নরম ব্রাশ বা তুলো দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা
-
দিনে দুইবার দাঁত ব্রাশ করা (সকাল ও রাতে ঘুমানোর আগে)
-
শিশুর জন্য নরম ব্রাশ এবং ফ্লোরাইডযুক্ত শিশু-পেস্ট ব্যবহার করা
-
এক বছরের কম বয়সী শিশুর জন্য খুব সামান্য পেস্ট ব্যবহার করা
-
মিষ্টি ও চকলেট সীমিত করা এবং খাওয়ার পর পানি খাওয়ানো বা দাঁত পরিষ্কার করা
-
রাতে দুধ খাওয়ার পরে দাঁত মুছে দেওয়া
-
নিয়মিত ৬ মাস অন্তর ডেন্টাল চেকআপ করা
-
ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-ডি ও ফসফরাস সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো (দুধ, দই, পনির, সবজি ও ফল)
-
শিশুর মুখ সবসময় পরিষ্কার রাখা
-
হালকা ঠান্ডা চামচ দিয়ে মাড়ি ম্যাসাজ করানো
-
শিশুকে দাঁত ও মাড়ি নিয়ে সচেতন করা
-
শিশুর বোতল, খেলনা ও খাবারের বাটি সবসময় পরিষ্কার রাখা
শিশুর দাঁতের সমস্যা কখন চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে-
- দাঁত ওঠায় দেরি হলে
- দাঁত ক্ষয় হতে থাকলে
- দাঁতে প্রচণ্ড ব্যথা হলে
- মাড়ি ফুলে গেলে ও পুঁজ হলে
- দাঁতের কারণে শিশুর খাওয়ায় সমস্যা হলে
শিশুর দাঁতের ডাক্তারি চিকিৎসা-
চিকিৎসক সাধারণত শিশুর দাঁতের সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসা দেন। দাঁতের ক্ষয় হলে ফিলিং করা হয়। মাড়ি প্রদাহ হলে ওষুধ বা জেল দেওয়া হয়। সংক্রমণ হলে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হতে পারে।
উপসংহার-
শিশুর দাঁতে সমস্যা একটি সাধারণ বিষয় হলেও অবহেলা করলে তা গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। দাঁত ওঠার সময় শিশুর ব্যথা, মাড়ি ফুলে যাওয়া বা দাঁতের ক্ষয় স্বাভাবিক সমস্যা হলেও অভিভাবকদের সচেতন থাকা জরুরি। নিয়মিত দাঁতের যত্ন, সঠিক খাবার এবং সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ শিশুর দাঁতের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
প্রশ্নোত্তর-
শিশুর দাঁত কখন ওঠে?
সাধারণত ৬ মাস বয়সে শিশুর প্রথম দাঁত ওঠে এবং ২ থেকে আড়াই বছরে সব দুধ দাঁত ওঠে।
দাঁত ওঠার সময় শিশুর জ্বর হওয়া কি স্বাভাবিক?
হালকা জ্বর হতে পারে, তবে উচ্চ জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শিশুর দাঁত ক্ষয় কেন হয়?
রাতে দুধ খাওয়ার পর দাঁত পরিষ্কার না করা, বেশি মিষ্টি খাওয়া এবং দাঁতের যত্নের অভাবে দাঁত ক্ষয় হয়।
শিশুর দাঁত ওঠায় দেরি হলে কী করা উচিত?
১২ মাস পার হওয়ার পরও দাঁত না উঠলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
শিশুর দাঁতের যত্ন নেওয়া কীভাবে শুরু করব?
প্রথম দাঁত ওঠার পর থেকেই নরম ব্রাশ দিয়ে দিনে দুইবার দাঁত পরিষ্কার করতে হবে।