গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লালা: একটি সাধারণ সমস্যা-
গর্ভাবস্থায় শরীরের হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা হলো গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লালা (Excess Saliva in Pregnancy)। এটি অস্বস্তিকর হতে পারে, বিশেষ করে পাবলিক প্লেসে বা ঘুমের সময়। তবে এটি প্রায়শই অস্থায়ী এবং স্বাভাবিক।
গর্ভাবস্থায় লালা বাড়ার প্রধান কারণ হলো হরমোনের পরিবর্তন। বিশেষ করে প্রোজেস্টেরন এবং এস্ট্রোজেন হরমোনের স্তর বৃদ্ধি লালা গ্রন্থিকে প্রভাবিত করে।
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লালা কেন হয়?-
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লালা হওয়ার কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে:
১. হরমোনাল পরিবর্তন
গর্ভাবস্থায় প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এটি হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে এবং মুখে অতিরিক্ত লালা জমতে পারে।
২. অম্লতার বৃদ্ধি (Acid Reflux)
গর্ভাবস্থায় হরমোন পরিবর্তনের কারণে গ্যাসট্রিক এসিড বেশি হতে পারে। এই অম্লতা মুখে লালা বাড়িয়ে দেয়।
৩. মুখের সংক্রমণ বা দাঁতের সমস্যা
দাঁতের ক্ষয়, মাড়ি সংক্রমণ বা মুখে সংক্রমণ থাকলে লালা উৎপাদন বাড়তে পারে।
৪. ভোজন অভ্যাস ও খাবারের ধরন
মশলাদার, তেলযুক্ত বা জাঙ্ক ফুড খেলে লালা বেশি হতে পারে।
৫. মতলব বা বমি ভাব
গর্ভকালীন বমি ভাব বা বমির সমস্যা লালা বেশি উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কিত।
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লালা সম্পর্কিত লক্ষণ-
গর্ভাবস্থায় লালা বাড়ার সময় কিছু লক্ষণ দেখা যায়:
১. মুখে বারবার অতিরিক্ত লালা জমা হওয়া
২. বমি ভাব বা বমির সঙ্গে লালা বাড়া
৩. মুখে অস্বস্তি বা ঘা লাগা
৪. খাবার খাওয়ার সময় অস্বস্তি
এই লক্ষণগুলো সাধারণত গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে বেশি দেখা যায়।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য ঘরোয়া প্রতিকার-
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লালা কমাতে কিছু ঘরোয়া প্রতিকার কার্যকর হতে পারে:
১. ছোট ছোট খাবার খাওয়া
বড় খাবারের পরিবর্তে দিনে কয়েকবার ছোট খাবার খাওয়া লালা উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
২. পানি বেশি পান করা
পর্যাপ্ত পানি পান করলে মুখের শুকনো ভাব কমে এবং অতিরিক্ত লালা নিয়ন্ত্রণ হয়।
৩. গরম লবণ জলে কুলি করা
এটি মুখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এবং লালা উৎপাদন কমাতে সাহায্য করে।
৪. তেলযুক্ত ও মশলাদার খাবার এড়ানো
এ ধরনের খাবার লালা বাড়াতে পারে, তাই খাওয়া কমানো উচিত।
৫. চুইং গাম বা লোলিপপ ব্যবহার করা
চুইং গাম চিবানো বা লোলিপপ খাওয়া লালা গ্রন্থিকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং বমি ভাব কমায়।
৬. দাঁতের যত্ন নেওয়া
প্রতিদিন দাঁত মাজা এবং মুখ পরিষ্কার রাখা লালা বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে।
৭. ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করা
যদি লালা অত্যধিক হয় এবং বমি বা খারাপ স্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লালা: কখন ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন-
গর্ভাবস্থায় লালা সাধারণত স্বাভাবিক হলেও কখনো কখনো এটি স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। নিচের অবস্থায় ডাক্তার দেখানো উচিত:
১. লালা অতিরিক্ত হওয়ার কারণে খাওয়া বা ঘুমানো কঠিন হয়ে যায়
২. বমি বা বমি ভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়
৩. মুখ বা গলার সংক্রমণ দেখা দেয়
৪. ওজন হঠাৎ কমতে শুরু করে
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লালা কমানোর খাবার ও পানীয়-
১. হালকা খাবার: ভাত, ডাল, সবজি, কম তেলযুক্ত খাবার
২. ফলমূল: আপেল, পেয়ারা, কলা, কম অম্লযুক্ত ফল
৩. হালকা চা বা আদা চা: বমি ভাব কমায় এবং লালা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
৪. প্রচুর পানি এবং জলজাতীয় খাবার: লালা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
উপসংহার-
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লালা একটি স্বাভাবিক এবং অস্থায়ী সমস্যা, যা সাধারণত হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে হয়। যদিও এটি অস্বস্তিকর, ঘরোয়া প্রতিকার এবং সঠিক যত্ন গ্রহণ করলে সমস্যা অনেকাংশে কমানো যায়। তবে যদি অতিরিক্ত লালা শরীরের অন্য সমস্যা যেমন বমি, অস্বাস্থ্যকর ওজন হ্রাস বা সংক্রমণের সঙ্গে যুক্ত হয়, তবে অবশ্যই ডাক্তার পরামর্শ নেয়া জরুরি।
গর্ভবতী মায়েদের উচিত নিজের স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো।
প্রশ্নউত্তর-
প্রশ্ন: গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লালা স্বাভাবিক কি?
উত্তর: হ্যাঁ, এটি অনেক গর্ভবতী মহিলার জন্য স্বাভাবিক। সাধারণত হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে হয়।
প্রশ্ন: লালা বেশি হলে কী ঘরোয়া প্রতিকার আছে?
উত্তর: ছোট খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা, চুইং গাম চিবানো, মুখ পরিষ্কার রাখা, এবং অম্লতা কমানো সহ ঘরোয়া প্রতিকার কার্যকর।
প্রশ্ন: কোন সময় ডাক্তার দেখানো উচিত?
উত্তর: লালা অত্যধিক হয়ে খাওয়া বা ঘুমাতে অসুবিধা হলে, বমি ভাব বা সংক্রমণ দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত।
প্রশ্ন: লালা কমানোর জন্য কোন খাবার এড়ানো উচিত?
উত্তর: মশলাদার, তেলযুক্ত এবং জাঙ্ক ফুড খাওয়া কমানো উচিত। এছাড়া অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবারও এড়ানো ভালো।
প্রশ্ন: লালা উৎপাদন হ্রাসের জন্য কোন ঘরোয়া টিপস আছে?
উত্তর: হালকা খাবার খাওয়া, পানি বেশি পান করা, চুইং গাম চিবানো, এবং মুখ পরিষ্কার রাখা সহায়ক।