গর্ভাবস্থায় পাঁজরে ব্যথা: কারণ, ঝুঁকি, প্রতিকার ও যত্ন

গর্ভাবস্থায় পাঁজরে ব্যথা: একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-

গর্ভাবস্থা একজন নারীর জীবনের একটি আনন্দময় অধ্যায় হলেও এ সময় শরীরে বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনগুলো অনেক সময় ব্যথা বা অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর মধ্যে অন্যতম হলো গর্ভাবস্থায় পাঁজরে ব্যথা। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ত্রৈমাসিকে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। যদিও এটি সাধারণত গুরুতর কোনো সমস্যা নয়, তবে অনেক সময় এটি মাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়।

গর্ভাবস্থায় পাঁজরে ব্যথার কারণ-

গর্ভাবস্থায় শরীরে নানা পরিবর্তনের কারণে পাঁজরে ব্যথা হতে পারে। এর প্রধান কারণগুলো হলো:

১. শিশুর বৃদ্ধি ও চাপ
গর্ভাবস্থার শেষের দিকে শিশুর আকার বড় হতে থাকে। এতে জরায়ু উপরের দিকে চাপ সৃষ্টি করে এবং পাঁজরের চারপাশের স্নায়ু ও পেশীতে টান পড়ে।

২. হরমোন পরিবর্তন
প্রোজেস্টেরন ও রিল্যাক্সিন হরমোন শরীরের পেশী ও লিগামেন্ট নরম করে। এর ফলে পাঁজরের চারপাশে ব্যথা অনুভূত হয়।

৩. হজমের সমস্যা
অতিরিক্ত গ্যাস বা অ্যাসিডিটি থাকলে তা পাঁজরের নিচে ব্যথার অনুভূতি তৈরি করতে পারে।

৪. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চাপ
গর্ভাবস্থায় যকৃত, পেট ও অন্যান্য অঙ্গ উপরের দিকে চাপ পড়ে। এর প্রভাবে পাঁজরের এলাকায় অস্বস্তি তৈরি হতে পারে।

৫. খারাপ ভঙ্গি
দীর্ঘ সময় বসে থাকা বা ঝুঁকে কাজ করলে পাঁজরের পেশীতে চাপ পড়ে এবং ব্যথা হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় পাঁজরে ব্যথার সাধারণ লক্ষণ-

  • ডান বা বাম পাশের পাঁজরে হালকা থেকে তীব্র ব্যথা।
  • দীর্ঘ সময় বসে থাকলে ব্যথা বাড়া।
  • শ্বাস নিতে কষ্ট বা চাপ অনুভব করা।
  • রাতে শুয়ে থাকলে অস্বস্তি বেশি হওয়া।
  • হাঁটাহাঁটি বা ভঙ্গি পরিবর্তন করলে কিছুটা আরাম পাওয়া।

গর্ভাবস্থায় পাঁজরে ব্যথা কখন উদ্বেগজনক?-

যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি স্বাভাবিক, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। যেমন:

  • হঠাৎ তীব্র ও অসহ্য ব্যথা।
  • শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া।
  • কাশির সঙ্গে রক্ত আসা।
  • জ্বর বা ঠান্ডা লাগা।
  • বমি বা অতিরিক্ত দুর্বলতা।

এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

গর্ভাবস্থায় পাঁজরে ব্যথা প্রতিকার-

গর্ভাবস্থায় পাঁজরে ব্যথা কমাতে কিছু কার্যকর উপায় হলো:

১. সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা
সবসময় সোজা হয়ে বসা ও দাঁড়ানো উচিত। এতে পাঁজরের ওপর চাপ কম পড়ে।

২. বসার ভঙ্গি পরিবর্তন
দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসে না থেকে মাঝে মাঝে হাঁটা-চলা করা ভালো।

৩. হালকা ব্যায়াম
গর্ভবতী মায়েদের জন্য নিরাপদ যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং পেশী শিথিল করতে সাহায্য করে।

৪. গরম সেঁক
পাঁজরের ব্যথায় হালকা গরম সেঁক আরাম দিতে পারে।

৫. পুষ্টিকর খাবার
অতিরিক্ত তৈলাক্ত বা ঝাল খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এতে গ্যাস ও অ্যাসিডিটি কমবে।

৬. ম্যাটারনিটি বালিশ ব্যবহার
শোয়ার সময় পাশে বালিশ ব্যবহার করলে চাপ কম পড়ে এবং আরাম পাওয়া যায়।

গর্ভাবস্থায় পাঁজরে ব্যথা প্রতিরোধ-

১. নিয়মিত হাঁটা ও হালকা ব্যায়াম করা।
২. সঠিক পরিমাণে পানি পান করা।
৩. আরামদায়ক জামা-কাপড় পরা।
৪. অতিরিক্ত ঝুঁকে কাজ না করা।
৫. শোয়ার সময় পাশ ফিরে শোয়া।

ঘরোয়া যত্ন-

  • এক গ্লাস গরম দুধে সামান্য মধু মিশিয়ে খেলে শরীর আরাম পায়।
  • আদা চা হজমে সহায়তা করে এবং গ্যাস কমায়।
  • হালকা মালিশ পাঁজরের পেশীকে শিথিল করতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় পাঁজরে ব্যথা: শিশুর জন্য কি ঝুঁকিপূর্ণ?-

সাধারণত গর্ভাবস্থায় পাঁজরে ব্যথা শিশুর জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে যদি এটি গুরুতর রোগের কারণে হয়, যেমন—লিভারের সমস্যা, সংক্রমণ বা নিউমোনিয়া, তবে শিশুর জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

উপসংহার-

গর্ভাবস্থায় পাঁজরে ব্যথা একটি সাধারণ শারীরিক সমস্যা হলেও এটি মাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিতে পারে। বেশিরভাগ সময় সঠিক ভঙ্গি, হালকা ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের মাধ্যমে এ ব্যথা কমানো যায়। তবে ব্যথা যদি তীব্র হয় বা অন্য উপসর্গের সঙ্গে দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রশ্নত্তোর-

প্রশ্ন: গর্ভাবস্থায় পাঁজরে ব্যথা কি স্বাভাবিক?
হ্যাঁ, গর্ভাবস্থায় শিশুর বৃদ্ধি এবং শরীরের পরিবর্তনের কারণে অনেক মায়ের পাঁজরে ব্যথা হয়, যা সাধারণত স্বাভাবিক।

প্রশ্ন: কোন মাসে গর্ভাবস্থায় পাঁজরে ব্যথা বেশি হয়?
সাধারণত দ্বিতীয় ও তৃতীয় ত্রৈমাসিকে শিশুর আকার বড় হওয়ার কারণে পাঁজরে ব্যথা বেশি হয়।

প্রশ্ন: গর্ভাবস্থায় পাঁজরে ব্যথা হলে কী করা উচিত?
সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা, হালকা ব্যায়াম, গরম সেঁক এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলে ব্যথা কমে। তবে ব্যথা তীব্র হলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা উচিত।

প্রশ্ন: গর্ভাবস্থায় পাঁজরে ব্যথা কি শিশুর জন্য ক্ষতিকর?
সাধারণত নয়। তবে যদি এটি লিভারের সমস্যা, নিউমোনিয়া বা গুরুতর সংক্রমণের কারণে হয়, তবে শিশুর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রশ্ন: গর্ভাবস্থায় পাঁজরে ব্যথা প্রতিরোধ করা যায় কীভাবে?
হ্যাঁ, সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা, আরামদায়ক জামা পরা, নিয়মিত হাঁটা ও হালকা ব্যায়াম করলে পাঁজরে ব্যথা অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
Scroll to Top