গর্ভাবস্থায় ওজন কমানো-
গর্ভাবস্থা একজন নারীর জীবনের বিশেষ সময়। এই সময়ে শরীরে নানা পরিবর্তন ঘটে এবং স্বাভাবিকভাবেই ওজন বেড়ে যায়। তবে অনেক সময় মায়েদের মনে প্রশ্ন জাগে—গর্ভাবস্থায় ওজন কমানো কি সম্ভব এবং এটি আদৌ নিরাপদ কিনা?
গর্ভাবস্থায় ওজন বাড়ার স্বাভাবিকতা-
প্রত্যেক নারীর গর্ভাবস্থায় ওজন কিছুটা বাড়ে। এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া।
- শিশুর বৃদ্ধি ও ওজন
- প্লাসেন্টা ও অ্যামনিওটিক ফ্লুইড
- মায়ের শরীরে রক্ত ও তরল বৃদ্ধির কারণে
- স্তন ও শরীরের চর্বি জমার কারণে
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজনের ঝুঁকি-
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মোটা হওয়া মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
- গেস্টেশনাল ডায়াবেটিস
- উচ্চ রক্তচাপ ও প্রি-এক্লাম্পসিয়া
- সিজারিয়ান ডেলিভারির সম্ভাবনা
- শিশুর অতিরিক্ত ওজন নিয়ে জন্ম
- প্রি-ম্যাচিউর ডেলিভারির ঝুঁকি
গর্ভাবস্থায় ওজন কমানো কি নিরাপদ?-
গর্ভাবস্থায় অনেক মায়ের মধ্যেই একটি সাধারণ প্রশ্ন থাকে—“গর্ভাবস্থায় ওজন কমানো কি নিরাপদ?”। সাধারণভাবে, গর্ভাবস্থায় ওজন বাড়া একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। কারণ এ সময় শুধু মায়ের শরীর নয়, শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্যও অতিরিক্ত পুষ্টি প্রয়োজন হয়। তবে ওজন বেশি হলে বা স্থূলতা (Obesity) থাকলে কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই বিষয়টি নিয়ে ডাক্তাররা বিশেষ পরামর্শ দেন।
গর্ভাবস্থায় নিরাপদভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণের উপায়-
- সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা
- পর্যাপ্ত পানি পান
- নিয়মিত হালকা ব্যায়াম
- পর্যাপ্ত ঘুম
- খাবারের সময় মেনে চলা
গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত-
- ভাজা-পোড়া
- সফট ড্রিঙ্কস
- ফাস্ট ফুড
- অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার
গর্ভাবস্থায় ওজন কমানোর চেষ্টা কখন করা উচিত নয়?-
- প্রথম তিন মাসে
- ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া
- হঠাৎ ডায়েটিং বা উপবাসের মাধ্যমে
গর্ভাবস্থায় ওজন কমানো ও মানসিক স্বাস্থ্য-
গর্ভাবস্থায় অনেক নারী অতিরিক্ত ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। তবে এ সময় ওজন কমানোর চেষ্টা করলে শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব পড়ে।
ওজন কমাতে গিয়ে যদি মা খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দেন বা অতিরিক্ত ব্যায়াম করেন, তবে শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টি ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এর ফলে মায়ের মনে অপরাধবোধ, উদ্বেগ এবং মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। আবার সমাজ বা আশপাশের লোকজনের মন্তব্যও মায়ের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিতে পারে।
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওজন কমানোর চেষ্টা মানসিক অস্থিরতা, হতাশা এমনকি প্রসব-পরবর্তী ডিপ্রেশনের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় লক্ষ্য হওয়া উচিত ওজন কমানো নয়, বরং সুস্থ থাকা এবং ইতিবাচক মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা।
গর্ভাবস্থায় ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাক্তারের ভূমিকা-
উপসংহার-
গর্ভাবস্থায় ওজন কমানো নিয়ে অনেক মা-ই চিন্তিত থাকেন। তবে মনে রাখতে হবে, এই সময়ে সরাসরি ওজন কমানোর চেষ্টা না করে স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণ করাই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়। অতিরিক্ত মোটা হওয়া মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হলেও হঠাৎ করে ডায়েটিং বা উপবাস করা বিপজ্জনক।
এই সময়ে সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং যথেষ্ট বিশ্রাম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়।
শেষ কথা হলো—মায়ের সুস্থতা মানেই সন্তানের সুস্থতা। তাই ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে গর্ভাবস্থাকে উপভোগ করুন এবং নিরাপদ জীবনযাত্রা অনুসরণ করুন।
প্রশ্নোত্তর-
প্রশ্ন ১: গর্ভাবস্থায় ওজন কমানো কি নিরাপদ?
উত্তর: সরাসরি ওজন কমানো নয়, তবে ওজন নিয়ন্ত্রণ নিরাপদ।
প্রশ্ন ২: গর্ভাবস্থায় কতটা ওজন বাড়া স্বাভাবিক?
উত্তর: ১০–১৫ কেজি।
প্রশ্ন ৩: গর্ভাবস্থায় কি ডায়েটিং করা যাবে?
উত্তর: না।
প্রশ্ন ৪: কোন ব্যায়াম করা যায়?
উত্তর: হাঁটা, প্রেনাটাল যোগব্যায়াম, হালকা স্ট্রেচিং।
প্রশ্ন ৫: ওজন বেশি হলে কী করবেন?
উত্তর: ডাক্তারের পরামর্শ নিন ও সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন।